কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি করে এক মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। এতে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার জন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কিছু শব্দ চয়ন করেছেন। বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে ডেপুটি কমিশনার কিশোরগঞ্জের মেইল থেকে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখার সহকারী কমিশনার রওশন কবির।
এদিকে আবু সাঈদকে কটূক্তির প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোই ছিল এ আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য। জেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্য থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া কিছু শব্দ চয়ন করেন, যা জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এটি তাঁর একান্তই নিজস্ব বক্তব্য এবং জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জ এই বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছে। তার বক্তব্যের বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। তাঁরা বলেন, ইদ্রিস আলী গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন এবং জেলা প্রশাসকের সামনে বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক শুনেও না শোনার ভান করেন। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান কোনো প্রতিবাদ না করায় তাঁকে কিশোরগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে ছাত্রসমাজ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এ সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শহীদ আবু সাঈদকে কটাক্ষ বা ব্যঙ্গ করে কিছু বলিনি। আমি শুধু বলেছি, বিজয় দিবসের পোস্টারে আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছবি দিলে ভালো হতো। আর জয় বাংলা স্লোগান হলো মুক্তিযোদ্ধার স্লোগান। সেজন্য আমি বক্তৃতা শেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলেছি। আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম না।’
কিশোরগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক গতকাল রাত ৯টার দিকে তাঁর বাংলোয় আমাদের ডেকেছিলেন। তাঁর কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারিনি। তা ছাড়া উনারা (প্রশাসন) গভীর রাতে যে একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, সেটাও অনেকটা দায়সারা মনে হচ্ছে। যেখানে জেলা প্রশাসনের কারও স্বাক্ষর বা সিল নেই। এক সপ্তাহ পরে যদি এটা অস্বীকার করা হয়, তাহলে করার কিছু থাকবে না। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আজ দুপুর ১২টার দিকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’