কুষ্টিয়ায় ডিবি পরিচয়ে পাঁচজনকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে মাদ্রাসার তিন শিক্ষকসহ পাঁচজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে দুটি পরিবারের পক্ষ থেকে কুমারখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ওই পাঁচজনের কারও খোঁজ মেলেনি।

জানতে চাইলে বিকেলে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি জিডির বিষয়ে ওসি আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু গতকাল রাতে ডিবি পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ খোঁজাখুঁজি করছে।’

ওই পাঁচ ব্যক্তি হলেন কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম গ্রামের মৃত সালাউদ্দিনের ছেলে মো. আইয়ুব আলী (৩৫)। তিনি বাঁশগ্রাম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক। পান্টি ইউনিয়নের ওয়াসী গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মো. মোস্তফা রাশেদ ওরফে পান্না (৪৭)। তিনি শহীদ নগর শৈলকুপা মাদ্রাসার শিক্ষক। যদুবয়রা ইউনিয়নের বহলবাড়িয়া গ্রামের মো. আলতাফ হোসেনের ছেলে মো. হাফিজুল রহমান (২৬)। তিনি লক্ষ্মীপুরের মসজিদভিত্তিক শিশুশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক। জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের মো. আবদুল জলিলের ছেলে মো. হাসান আলী (৩৫) ও মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজেদ আলীর ছেলে মো. হান্নান (৩০)। তাঁরা বাড়িতেই থাকেন এবং বর্তমানে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত নন।

জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোরে হাসানের বাবা ও হান্নানের বড় ভাই আমার বাড়িতে এসেছিলেন। দুজনকেই প্রশাসনের পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তাঁরা।’

আইয়ুব আলীকে ভালো মানুষ বলে মনে করেন তাঁর সহকর্মী বাঁশগ্রাম কামিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ওলিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি লোভে পড়ে একটি অনলাইন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন আইয়ুব আলী। অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়েছিলেন। এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়ে থাকতে পারে।’

মোস্তফা রাশেদের নিকটাত্মীয় যদুবয়রা ইউনিয়নের এনায়েতপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মোস্তফা রাশেদ নিরীহ ছেলে। কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই। কীভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না।’

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই পাঁচজনের সবাই এসবিএসএল নামের একটি অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তাঁদের কার্যালয় ছিল পান্টি বাজার এলাকার নৌশের মোড়ে। প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের মো. তফসের হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (তুষার)। প্রায় ছয় মাস আগে ইমরান টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়ে গেলে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

আজ সকালে থানায় জিডি করেছেন বলে জানিয়েছেন নিখোঁজ হাফিজুলের চাচা তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে ১০–১২ জন বাড়িতে গিয়ে হাফিজকে ডাকেন। হাফিজ বাইরে এলে তাঁরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যান।

নিখোঁজ মোস্তফা রাশেদের শ্যালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে বাড়ি থেকে প্রশাসনের লোকজন পরিচয়ে মোস্তফাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় গিয়ে তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি। জিডি করা হয়েছে।’

গতকাল রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আইয়ুব আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে তাঁর স্বজন ও বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য তারেক আজিজ বলেন, কুমারখালী থানায় খোঁজ নিয়েও কিছু জানতে পারেননি তিনি। জিডির প্রক্রিয়া চলছে।

জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় আগের কোনো অভিযোগ নেই।