৬৮ ঘণ্টা পার হলেও আবু আসিফের খোঁজ মেলেনি, স্ত্রীও বাসায় নেই

আবু আসিফ আহমেদ
আবু আসিফ আহমেদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা ও আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট আবদুস সাত্তার ভূঞার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবু আসিফ আহমেদের তিন দিন ধরে কোনো খোঁজ নেই। প্রায় ৬৮ ঘণ্টা পার হলেও প্রশাসন তাঁকে খুঁজে বের করতে পারেনি। তাঁর স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীনও বাসায় নেই। সোমবার বিকেল থেকে তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। বাসায় গিয়েও মিলেনি তাঁর স্ত্রীর দেখা।

এদিকে আবু আসিফ আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার ঢাকার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছেন, স্থানীয় জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদেরকে ইসি এমন কোনো নির্দেশ দেননি। আমাদের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছেন। আমরা সেটির জবাব দিয়েছি।’ তাঁকে খোঁজে পাওয়া গেছে কি না প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তাঁর পরিবার কোনো অভিযোগই করেনি।’

আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক বিএনপি নেতা ও ওই আসন থেকে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আবু আসিফের নিখোঁজে নির্বাচনে সাত্তারের বিজয়ের পথ আরও পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকেরা।

এর আগে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ হন আবু আসিফের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী ও তাঁর শ্যালক শাফায়াত সুমন (৩৮)। তিনি আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ছাড়া আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মুসা মিয়াকে (৮০) গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৩ জানুয়ারি আশুগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলার একটি মামলায় মুসাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাজার এলাকায় অবস্থিত নিখোঁজ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের বাসভবন। সোমবার দিনভর বাসভবনে কাউকেই পাওয়া যায়নি

আবু আসিফ আহমেদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আবু আসিফকে ভয় দেখানো হয়েছে। তাঁকে মেরে লাশ মেঘনায় ফেলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি হয়তো ভয়েই আত্মগোপনে গেছেন।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে আশুগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থিত আবু আসিফ আহমেদের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসার সামনের প্রধান ফটক ও পেছনের ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ফটকে শব্দ করলেও এবং দারোয়ানকে ডাকলেও কোনো সাড়া মিলেনি। স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল থেকে অনেকে আসছেন। কিন্তু বাসা থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। বাসায় কেউ আছে কি না, তাঁরা বলতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার রাতে আবু আসিফের স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে যান। তিনি সম্ভবত ঢাকায় চলে গেছেন। বাসার দারোয়ান ইছু মিয়া, ব্যবস্থাপক সোহাগ মিয়া কারও কোনো পাত্তা নেই।

বিষয়টি জানতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুননিছা মেহেরীন মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেন তাঁর আত্মীয় জামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডাম বাসায় নেই। গত শনিবার রাতে ম্যাডাম বাসা থেকে বের হয়েছেন। এখনো আসেননি। কোথায় আছেন, জানি না। ম্যাডাম আসলে আপনাকে ফোন করতে বলব।’ আবু আসিফ আহমেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনো তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ এরপর একাধিকবার চেষ্টা করলেও মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে গত রোববার মেহেরুননিছা মেহেরীন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘গত শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ আমার স্বামী। আমি কীভাবে নির্বাচনের কাজ করব বুঝতে পারছি না। ওনাকে যেহেতু পাচ্ছি না, উনি সিদ্ধান্ত না দিলে তো নির্বাচন ছাড়তে পারব না। কর্মীরা নির্বাচন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন। তবে বেশ কিছু নেতা–কর্মী ও এজেন্টদের তারা (প্রশাসন) হয়রানি করছে। কারা এজেন্ট হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। আমাদের যদি এভাবে চাপিয়ে রাখে আমরা কোথায় দাঁড়াব? আমাদের আশ্রয়টা কোথায়? ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছি। কারণ, আমাকে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবু আসিফ আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। গত রোববার তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এর পর থেকে সম্ভবপর সব জায়গায় আমরা তাঁর সন্ধান করছি।’