জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এলাকায় ফিরে গণসংবর্ধনা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। আজ শুক্রবার বিকেলে হিজলা উপজেলা মাঠে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেন নেতা-কর্মীরা। এতে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের হাজারো নেতা-কর্মী অংশ নেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শাম্মী আহমেদ বলেন, হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে আর কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলবে না। দলের নাম ভাঙিয়ে, ভুয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে কেউ জনগণকে কষ্ট দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপশক্তি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা করলে তাঁকেও কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি নেতা-কর্মীদেরও সীমা লঙ্ঘন না করার হুঁশিয়ারি দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাম্মী আহমেদ। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত জটিলতায় তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ওই আসনে আবার সংসদ সদস্য হয়েছেন পংকজ নাথ। শাম্মী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ভোটের পর হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দুই উপজেলায় ভোটের পর ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৫০টি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগের কাগজপত্র হাতে পেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনে তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা হয়। পরবর্তী সময়ে দলের মনোনয়নে তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শাম্মীর সমর্থক নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, দলীয় মনোনয়ন পেয়েও আদালতে বাতিল হওয়ায় তাঁরা একের পর এক হামলায় চরম বিপদের মধ্যে পড়েন। এখন সংরক্ষিত নারী আসনে শাম্মী সংসদ সদস্য হওয়ায় এলাকার রাজনীতিতে ভারসাম্য আসবে। পংকজ নাথের একক কর্তৃত্বও খর্ব হবে। কারণ, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী শাম্মীর পক্ষে।
আজ সকালে বরিশালে বরিশালে আসেন শাম্মী আহমেদ। দুপুরে সড়কপথে তিনি হিজলায় যান। পথে মুলাদী এলাকায় নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে হিজলায় নিয়ে যান। সেখানে উপজেলা পরিষদ মাঠে বিকেল চারটায় গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য পংকজ নাথের নাম উল্লেখ না করে শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘কোনো অপশক্তির দ্বারা আমাদের নেতা-কর্মীদের যদি হামলা-মামলার শিকার হতে হয়, তবে আমরা কঠোর হস্তে সেই অপশক্তিকে দমন করব। কেউ ভুয়া দলীয় কমিটি পরিচয় দিয়ে বিশৃঙ্খলা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার প্রয়াত বাবা এবং আমরা মানুষের সঙ্গে কোনো দিন বেইমানি করিনি। নির্বাচনের আগে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলাম। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে নারী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করে হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জের মানুষের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।’
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনছুর আহমেদ, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব আহমেদ, সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাব মাহমুদ, কাজিরহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।