আটঘর খালে পেয়ারার ভাসমান হাট। পিরোজপুরের নেছারাবাদে
আটঘর খালে পেয়ারার ভাসমান হাট। পিরোজপুরের নেছারাবাদে

পিরোজপুরের পেয়ারাবাগানে

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের গ্রামগুলো পেয়ারাবাগানের জন্য বিখ্যাত। গ্রামের খালগুলোর তীরে রয়েছে সারি সারি পেয়ারা আর আমড়ার বাগান। পেয়ারা ও আমড়া বেচাকেনার জন্য আটঘর কুড়িয়ানা খালে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকালে ভাসমান হাট বসে।

আটঘর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির ভীমরুলিতে রয়েছে পেয়ারার সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট। পেয়ারার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বেচাকেনায় মুখর থাকে এ হাট। পর্যটকেরা পেয়ারাবাগান ঘুরে দেখার পাশাপাশি ভাসমান হাটে কিছু সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এ কারণে আটঘর থেকে ভীমরুলি ভাসমান হাটে যাওয়ার নৌপথের পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ‘পেয়ারা পার্ক’।

পেয়ারাবাগানে একদল পর্যটক। শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার কঠুরাকাঠি গ্রামে

খালের পাশে সৃজন করা এসব বাগান ঘুরে দেখার পাশাপাশি ইচ্ছেমতো পেয়ারা খাওয়া যায়। বছরের মধ্য জুলাই থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেয়ারার মৌসুমে দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা আসেন। খালের মধ্যে ছোট ছোট ডিঙিনৌকায় ঢেউয়ের তালে তালে পেয়ারা বেচাকেনার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকেরা।

এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রতি শুক্রবার আটঘরের খালে ডিঙিনৌকার হাট বসে। এখানে পেয়ারাবাগান ও ভাসমান হাটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসা। কয়েক বছর আগে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পেয়ারাবাগানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পার্ক ও পিকনিক স্পট। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে পেয়ারাবাগান ঘুরে গেছেন ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী জলাবাড়ী ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে রয়েছে ২ হাজার ২৫টি সুদৃশ্য পেয়ারাবাগান। অন্তত ২০০ বছর ধরে গ্রামগুলোয় বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ করা হচ্ছে। নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, আদমকাঠি, ধলহার খালে পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিন ভাসমান হাট বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে পেয়ারা কিনতে আসেন। এ বছর প্রতি হেক্টরে গড়ে ১০ টন পেয়ারার ফলন হয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, ভারতের বিহার রাজ্যের গয়া থেকে কেউ একজন একটি সুমিষ্ট পেয়ারা এনেছিলেন। সেই পেয়ারার বীজ বপন করে এ অঞ্চলে পেয়ারা চাষের গোড়াপত্তন ঘটে। গয়া থেকে আনা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকদের কাছে পেয়ারা ‘গৈয়া’ নামে পরিচিত। আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায়। পেয়ারা চাষ ও ব্যবসাকে ঘিরে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ১৫ থেকে ২০টি ছোট–বড় ব্যবসাকেন্দ্র।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আটঘরে একটি চারতলা অতিথিশালা তৈরির কাজ শুরু করেছি। পর্যটকদের জন্য দুটি ওয়াশরুম তৈরি করা হয়েছে। পেয়ারাবাগানের মধ্যে থাকা ছোট খালগুলো খনন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

তবে পর্যটকেরা যেন পেয়ারাবাগান ও এর আশপাশের খালে প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেট ফেলে পরিবেশদূষণ না করেন, সে আহ্বান জানান স্থানীয় লোকজন।

যেভাবে যাওয়া যাবে

ঢাকা থেকে নৌ ও সড়কপথে বরিশাল ও ঝালকাঠি যাওয়া যাবে। বরিশাল থেকে সড়কপথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে আটঘর কুড়িয়ানা। বরিশাল নগরীর বটতলা থেকে ডিজেলচালিত ‘ম্যাজিক গাড়ি’তে আটঘর কুড়িয়ানা যাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে সড়কপথে যেকোনো গাড়িতে বা মোটরসাইকেলে ভীমরুলি যাওয়া যায়। আটঘর কুড়িয়ানা ভাসমান হাট থেকে ট্রলারে বা নৌকায় পেয়ারাবাগান দেখতে দেখতে ভীমরুলি যাওয়া যাবে। আবার ভীমরুলি থেকেও আটঘর কুড়িয়ানা যাওয়া যায়। এ ছাড়া ছোট নৌকায় পেয়ারাবাগান ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।