রমজান মাসে শসার চাহিদা বাড়ে। অথচ এই মাসেও রাজশাহীতে শসাচাষিদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এমনটিই দাবি চাষিদের। কেন এই সময়ে শসা চাষে লোকসান হলো, তা নিয়ে চাষিরা বলছেন, চাহিদার অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। চাহিদা নির্ধারণ করে ফসল চাষের ব্যবস্থা থাকলে তাঁদের এই সর্বনাশ হতো না। রাজশাহীতে চাষিরা আড়াই থেকে তিন টাকা কেজি দরে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে শসা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে খুচরা বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে শসা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ১৯৫ হেক্টর জমিতে দেশি শসা চাষ হয়েছিল।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাহিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, রমজান মাসে শসা ও লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য শসা ও লেবুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য খামারবাড়ি থেকে তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। যার ফলে ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। শসা আমরা শুধু সালাদ হিসেবে খাই। এর অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে। শরীরের পানি ধরে রাখে। শসা তরকারি হিসেবে খাওয়ার প্রচলন শুরু হলে চাষিরা ভালো দাম পাবেন। এতটা দরপতন হবে না।’
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা হাইব্রিড শসা চাষ করেছিলেন, তাঁদের এবার এই সর্বনাশ হয়েছে। হাইব্রিড শসার জীবনকাল ৯০ দিন। রোপণের ৫০ দিন পর থেকে আহরণ করা যায়। ৯০ দিন শেষে গাছ মারা যেতে শুরু করে। খেত পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়। বছরের যেকোনো ৯০ দিন এই শসা চাষ করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চাষিরা রমজান মাস লক্ষ্য করে হাইব্রিড শসা চাষ করেছিলেন। এই মাসে ভালো কাটতির আশায় অনেক চাষি শসা চাষ করেছিলেন। কিন্তু এর বাজার সম্পর্কে কোনো মনিটরিং ছিল না। বাজারে কী পরিমাণ শসার চাহিদা আছে, আর কী পরিমাণ শসা চাষ করা হচ্ছে, এ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান চাষিদের কাছে ছিল না। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয়হীনতার কারণে চাষিদের সর্বনাশ হয়েছে।
রাজশাহীর মাস্টারপাড়া পাইকারি বাজারে ১১ মণ শসা নিয়ে এসেছিলেন গোদাগাড়ীর বেনীপুর গ্রামের চাষি মাজহারুল ইসলাম। শসা বিক্রি করে গাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে দেখেন, তাঁকে পকেট থেকে আরও ২৩০ টাকা দিতে হচ্ছে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলেন। সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। আশা করেছিলেন রোজার মাস সামনে, এবার শসায় পয়সা হবে। কিন্তু ১৫ রোজার পর থেকে তাঁকে ১০ টাকা কেজির নিচে শসা বিক্রি করতে হয়েছে। ২০ রোজার পর থেকে ৫-৬ টাকা কেজি দরে পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে শসা বিক্রি করতে হয়েছে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে কিনে এনে এলাকার ছোট হাটবাজারে তাঁর শসাই ২০-২৫ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়েছে। এখনো বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু এই খুচরা ব্যবসায়ীরা তাঁর ১০ মণ শসা একসঙ্গে কিনতে পারেন না। অল্প করে কেনেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের পাইকারি বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, এবার শসা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। তাঁরা চাহিদা ও জোগানের কোনো পরিসংখ্যান পান না। এই জন্য বুঝতে পারেন না যে কী পরিমাণ শসা চাষ করা দরকার। এটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো কর্তৃপক্ষ থাকলে চাষিদের এই লোকসান হতো না। কৃষি বিভাগ এটা করে না।
শুক্রবার রাজশাহীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, শসা খুচরা ১০ থেকে ৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। সব বিক্রেতাই বলছেন, তাঁর শসা দেশি। কেউ হাইব্রিডের কথা স্বীকার করছেন না। যিনি ১০ টাকা কেজি হাঁকছেন, তিনিও নন। সবাই বলছেন দেশি শসা।
নগরের বিনোদপুর কাঁচাবাজারে দেশি শসা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। একই দরে বিক্রি হয়েছে নগরের সাগরপাড়া বাজারে। ব্যবসায়ী রায়হান হোসেন বলেন, এই বাজারে হাইব্রিড শসা ৩০০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকা কেজি। বাজারে দেশি শসাও আছে। তাই হাইব্রিড শসার চাহিদা কম।