বরগুনা সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে ইটভাটার মালামাল আনা–নেওয়ার জন্য একটি পথ তৈরি করা হয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলায় এসবিসি নামের একটি ইটভাটার মালামাল পরিবহনের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে পথ তৈরি করা হয়েছে। এতে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যাগের সময় ওই পথ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে ফসলি জমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে। ওই ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে নদ ভরাট করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ওই ইটভাটার মালিক বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। বাঁধ কেটে পথ তৈরি এবং নদ ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল বুধবার বেশ কয়েকবার তাঁর মুঠোফোন কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে ওই ইটভাটার কর্মচারীরা দাবি করেন, তাঁরা নন, আগের মালিক বাঁধ কেটে ওই পথ নির্মাণ করেছেন।
বাঁধ কেটে পথ নির্মাণ করার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বরগুনা সদর উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মধুসূদন পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের বাঁধ হলে তা কেটে পথ তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। আগামীকাল ওই এলাকা পরিদর্শন করা হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেঁষে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন গোলাম মোস্তফা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। নদ থেকে বালু ও মাটি এবং নৌযানে করে আনা অন্যান্য মালামাল সহজে আনা ও নেওয়ার জন্য বাঁধটি কেটে পথ তৈরি করা হয়। বাঁধ কেটে ফেলায় ঝড়–জলোচ্ছ্বাস হলে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে জমির ফসল ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই বছর আগে ইটভাটাটি কিনে নেন বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিচ দিয়ে কয়েক ফুট কেটে চলাচলের পথ তৈরি করা হয়েছে। কালভার্টের আদলে পথটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইটভাটার পরিধি বাড়ানোর জন্য খাকদোন নদের চরের ২০০ ফুট ইট ও খোয়া ফেলে ভরাট করা হয়েছে।
ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, ইটভাটার মালিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে ইটভাটার মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে পথ তৈরি করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
এসবিসি ইটভাটার ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে রাস্তা নির্মাণ করিনি। এই ভাটার আগের মালিক বাঁধ কেটে এটি বানিয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাতে এলাকায় পানি না ঢুকতে পারে, সে জন্য ওই পথ মাটি ফেল বন্ধ করে রাখি।’
বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাকদোন নদের তীরে আমাদের সীমানাখুঁটি স্থাপন করা আছে। ভাটায় দখল হওয়া জমি আমাদের হলে ভাটামালিকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদের জন্য মন্ত্রণলায় তালিকা পাঠিয়েছি।’
এই বিষয়ে বরগুনা সদরের ইউএনও শামীম মিঞা বলেন, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাটার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে বাঁধ কাটার কোনো অনুমতি নেই। কেউ যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন, তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’