বরিশাল সিটি নির্বাচনে এবার ধনী ও শিক্ষিত প্রার্থী বেড়েছে

বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সুজনের সংবাদ সম্মেলন। কীর্তনখোলা মিলনায়তন, বরিশাল নগর, ৭ জুন
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ধনী ও শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এই তথ্য পেয়েছে।

‘একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ নেই’ এই স্লোগান নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করে সুজন। গতকাল দুপুরে নগরের সদর রোডে কীর্তনখোলা মিলনায়তনে সুজন বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, আমরা প্রার্থীদের তথ্যের যে বিশ্লেষণ তুলে ধরছি, তা গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হলে ভোটাররা কী ধরনের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সে সম্পর্কে ধারণা পাবেন। একই সঙ্গে মেয়র প্রার্থীসহ এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থীদের তথ্য সম্পর্কে তাঁরা জানবেন এবং জেনে, শুনে ও বুঝে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এবারের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন প্রার্থী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে ৩ জন মহিলা সাধারণ ওয়ার্ডে পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে সেই বারের থেকে এবারে স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর হার কমেছে। ২০১৮ সালে স্বল্প শিক্ষিতের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এবার তা ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এদিকে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ১৩ শতাংশে।

আবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেননি এমন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, এবারের নির্বাচনে তা কমে হয়েছে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ বলে অনেকে মনে করেন। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয়, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও অমঙ্গলজনক।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে ফৌজদারি মামলাসংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বর্তমান মামলা ছিল ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ, এবারের নির্বাচনে তা ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই প্রবণতা ইতিবাচক।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৭৫ শতাংশ, এই নির্বাচনে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পক্ষান্তরে বছরে কোটি টাকার অধিক উপার্জনকারী কোনো প্রার্থী বিগত নির্বাচনে না থাকলেও এবারে তা ১ দশমিক ৮০ শতাংশে (৩ জন) দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কম সম্পদের মালিকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৮ দশমিক ০৮ শতাংশ প্রার্থী ছিলেন ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। এবারের নির্বাচনে এই হার ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অপর দিকে গত নির্বাচনে কোটিপতির হার ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ থাকলেও এবারের নির্বাচনে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।  

এদিকে বরিশালে দায়-দেনাগ্রস্ত প্রার্থীর হার গত নির্বাচনের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়-দেনার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ; এবারের নির্বাচনে যা ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, বরিশাল মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, বিভাগীয় সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ প্রমুখ।