নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ২৪ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার, সবাই নাশকতার মামলার আসামি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। আজ রোববার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালিয়ে দলটির ২৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সবাইকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের দায়ের করা নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে জেলায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলো। এ ছাড়া গতকাল রাতেও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি নেতাদের দাবি, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দলের মহাসমাবেশ বানচাল করতে সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে বাছবিচার ছাড়াই নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিরোধী মতের কারণেই তাঁদের করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার অনেক নেতা-কর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন।

তবে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা এজাহারনামীয় আসামি। এ ছাড়া বিগত দিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ভিডিও ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা-পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সাবেক সহসভাপতি রাজিব ভূঁইয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য কাজী গোলাম কাদির (৫২) ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সোহেল মিয়া (৫০)। গত ২৭ নভেম্বর নাশকতার পরিকল্পনা ও পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার অভিযোগ এনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাইসহ বিএনপির ৩৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এসআই সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান।

বন্দর উপজেলার চৌধুরীবাড়ি এলাকা থেকে বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল প্রধান ও সোনাচরা এলাকা থেকে যুবদল নেতা মনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে বন্দর মডেল থানা-পুলিশ। উপজেলার নবীগঞ্জ ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী সোহেলের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম।

২০ নভেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ এবং গত বুধবার সদর উপজেলার কমর আলী স্কুল এলাকায় নাশকতার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তার কাজী আরিফ, গিয়াস উদ্দিন, রবিন মিয়া ও আল আমিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা-পুলিশ শহরের গলাচিপা আল্লামা ইকবাল রোড এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুমন, বিএনপি কর্মী মাসুদ, ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার রাতে শহরের চাষাঢ়ায় মশালমিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় থানার এসআই আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুনসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফারুক হোসেন, মিলু মিয়া, আবদুল কুদ্দুস ও মাজহারুল হক মোল্লা। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার এসআই ইমরান হোসেন।

রূপগঞ্জে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আফতাব হোসেন, হুমায়ুন কবির, আরিফ হোসেন ও জিল্লুর রহমান। তাঁরা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে আড়াইহাজারে পুলিশের বিশেষ অভিযানে জিয়া মঞ্চ আড়াইহাজার পৌরসভা কমিটির সভাপতি আরাফাত হোসেন, বিএনপির সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৭ নভেম্বর উপজেলার লেগুরদি এলাকায় মশালমিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বাড়িতে অভিযান, নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা
নারায়ণগঞ্জে ৯টি মামলা করা হয়েছে। ওই ৯ মামলায় ৯ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। তবে পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে সুমিলপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি অকিল উদ্দিনের বাড়িতে, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেনের বাড়িতে ও ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গাজী মনির হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশে লোক সমাগম বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ নেতা-কমীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। এতে নেতা-কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন, অনেকে মুঠোফোন বন্ধ করে দিয়েছেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার সুনির্দিষ্ট অভিযান রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়েছে।