পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামের (৩৭) সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল গোপালগঞ্জ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। সম্প্রতি তাঁর বদলি হয় ঢাকা মহানগর পুলিশে। তবে এখনো তাঁকে এসবি থেকে অবমুক্ত করা হয়নি। কখন ঢাকায় চলে যেতে হয়, তা ভেবে স্থানীয় স্বজনদের গত শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের বাসায় দাওয়াত দেন তিনি।
সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাইরে থাকা ছেলেকে বেলা দুইটার দিকে কল করেন। সাইফুল মাকে বলেন, ‘মা, একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি।’ কিন্তু সাইফুল আর ফিরে আসেননি। মায়ের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর একটি ফোন থেকে বাসায় জানানো হয়, সাইফুল আর বেঁচে নেই।
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের মৃত আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে সাইফুল। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি বিবাহিত এবং তাঁর চার বছর বয়সী একটি মেয়ে ও আড়াই মাস বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে।
শনিবার দুপুরে দায়িত্ব পালনকালে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের আড়পাড়া এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন সাইফুল। ময়নাতদন্ত শেষে একই দিন রাত ৯টার দিকে সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের বাড়িতে মরদেহ আনা হয়। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে নকুলহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
সাইফুলের বড় ভাই স্থানীয় বিভাগদী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘২০১৩ সালে পুলিশের এসআই পদে যোগদান করে সাইফুল। ইতিমধ্যে ওসি হওয়ার জন্য পরীক্ষা ও ট্রেনিং শেষ করেছিল। আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ওসি হওয়ার এবং ছেলে–মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার। তবে তার স্বপ্ন সড়কে পিষ্ট হয়ে গেল।’
গতকাল দুপুরে সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের ছোট সন্তানকে হারিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করছেন তাঁর মা। আর চার বছরের মেয়ে সাবিহা বুঝতেই পারছে না তার বাবা আর নেই। স্বামী হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে ছেলেশিশু কোলে নিয়ে বসে আছেন স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন যাঁরা আসছেন, তাঁদের জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন সাইফুলের বড় ভাই শিক্ষক রাসেল মাহমুদ ও বোন নাজমা সুলতানা।
সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম (৬৩) বলেন, ছেলের সঙ্গে তাঁরা গোপালগঞ্জে থাকতেন। তবে সেখান থেকে বদলি হওয়ার কারণে দুই-চার দিনের মধ্যে ছেলের ঢাকার কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। তাই শনিবার দুপুরে বাসায় আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। সকালে সাইফুল বাজার করে আনে। দুপুরে রান্নাবান্নার কাজ শেষে সাইফুলকে নিয়ে একসঙ্গে খাবেন বলে অপেক্ষায় ছিলেন। এর মধ্যে খবর আসে, ছেলে আর নেই।
সাইফুলের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এখন সন্তানদের কী হবে?