পোস্টমাস্টারের টাকা আত্মসাৎ

জমানো টাকা না পেয়ে তানোর ডাকঘরে নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা

রাজশাহী জেলার মানচিত্র
রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহীর তানোর উপজেলা ডাকঘরে জমানো টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক নারী। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই ডাকঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

ওই গ্রাহকের নাম পারুল বেগম (৩৫)। তাঁর বাড়ি তানোর পৌর এলাকার গোকুল গ্রামে, বাবার নাম ইসরাফিল হোসেন। গতকাল দুপুরে ডাকঘরের ভেতরে গাছে সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন পারুল। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন সেখানে ভিড় করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার আবদুল মালেক তাঁকে নিয়ে রাজশাহীতে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখান থেকে পারুলকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়।

এদিকে তানোরে উপজেলা পোস্ট অফিসে গ্রাহকের জমানো প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পোস্টমাস্টার মোকছেদ আলীর বিরুদ্ধে। গত ১৩ মার্চ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁর নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তিনি পিআরএলে (অবসর-উত্তর ছুটি) গেছেন।

গতকাল রাতে পারুল বেগম জানান, ৫ বছর ধরে তিনি পোস্ট অফিসে দুই লাখ টাকা জমা রেখেছেন। প্রায় ১৫ দিন আগে পোস্টমাস্টার ওই টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল টাকার কথা বলামাত্রই বর্তমান পোস্টমাস্টার জানিয়ে দেন, আগের পোস্টমাস্টার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। মামলার রায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

পারুল বেগম বলেন, ‘কার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হলো, সেটা জেনে আমি কী করে করব? গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। টাকা ফেরত না পেলে আমি অফিসে এসে আত্মহত্যা করব।’

ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার আবদুল মালেক জানান, প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আগের পোস্টমাস্টার মোকছেদ আলী। এ বিষয়ে দুদকে মামলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কতজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই। তবে ৬০–১০০ জন গ্রাহক হতে পারেন। ওই ঘটনা জানাজানি হলে ১৩ মার্চ মোকছেদ আলীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাঁকে তার আত্মীয়ের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। এখন তিনি কোথায় আছেন, তা জানি না।’

আবদুল মালেক আরও বলেন, গতকাল ওই নারীকে (পারুল বেগম) নিয়ে রাজশাহীতে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের কাছে গিয়েছিলেন। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। একজন পরিদর্শক ছিলেন। তাঁকে সব কিছু বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহীর ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মনিরুজ্জামান বলেন, মোকছেদ আলী সরকারি কর্মচারী হওয়ার কারণে থানায় অভিযোগ দিয়ে তাঁকে আটকানো সম্ভব হয়নি। পুলিশের পরামর্শে তাঁর নামে দুদকে মামলা করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত শেষে আদালতে এ বিষয়ে ফয়সালা হবে। আর নিয়ম অনুযায়ী এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোকছেদ আলী পেনশন সুবিধা পাবেন না।

গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমাদের তো টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। টাকা দিতে পারেন ওই পোস্টমাস্টার। খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তিনিও বাসায় নেই।’