ধূমপান–কাণ্ডের পর কুষ্টিয়ার সেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

ঘড়ির কাঁটায় বেলা পৌনে তিনটা। বিদ্যালয়টিতে সুনসান নীরবতা। শিক্ষার্থী কেউ নেই। কয়েকজন শিক্ষক বসে আছেন কক্ষে। আজ রোববার ১ হাজার ২২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ২৫০ জন। সরেজমিনে আজ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে এ চিত্র দেখা গেছে।

শিক্ষকেরা বলছেন, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে ধূমপান-কাণ্ডে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা এবং ওই ছাত্রীর জানাজায় সমবেদনা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এসব ঘটনার পর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার উপস্থিত ছিল মাত্র ৩২০ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাদে ধূমপান করার অভিযোগ ওঠে ছয় ছাত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়, স্মার্টফোনে ধূমপানের দৃশ্য ধারণ করেন বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষক ও একজন আয়া। ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের মারধর করে ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর টিসি (বদলির সনদ) ও অভিভাবকদের জানানোর ভয় দেখানো হয়। সেই অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। আরেক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর জানাজার পাশাপাশি একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন ছাত্রীর স্বজন ও এলাকাবাসী। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ সমবেদনা জানাতে গেলে তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির তিন কার্যদিবসের মেয়াদ শেষ হবে আজ। এ ছাড়া থানায় দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে ধূমপান-সংক্রান্ত ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমেছে। আজ ২৫০ জন উপস্থিত ছিল। তা-ও টিফিনের সময় সবাই চলে গেছে। তাঁর ভাষ্য, আগে টিফিনে শিক্ষকেরা বেত নিয়ে ফটকে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ঠেকাতেন। কিন্তু এখন ভয়ে শিক্ষকেরা নীরব।

আশরাফুল আলম আরও বলেন, ঘটনা তদন্তের জন্য প্রধান শিক্ষককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অসুস্থ থাকায় তদন্ত শুরুই হয়নি। সময় বাড়ানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলে, ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী কমে গেছে। স্যাররাও ক্লাসে আসতে চান না। তাঁরা বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ চান। একজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে।

কুমারখালীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, প্রশাসনের তদন্ত শেষ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তার আগে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।