হারানো মোটরসাইকেল ফিরে পাওয়ার আনন্দে গ্রামবাসীর জন্য ভোজের আয়োজন করেছেন ব্যবসায়ী আল-আমিন হক (৪০)। দেড় লাখ টাকা দামের পুরোনো একটি মোটরসাইকেল ফিরে পেয়ে ভোজে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে আজ রোববার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার যুগিশো গ্রামে।
আল–আমিন হক জানান, গত ২২ মার্চ তিনি মসজিদের বাইরে মোটরসাইকেল রেখে ভেতরে নামাজ পড়ছিলেন। নামাজে থাকা অবস্থায় চোর তাঁর মোটরসাইকেলটি চুরি করে পালিয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল রাজশাহীর মতিহার থানার পুলিশের সহযোগিতায় রাজশাহী নগরের বারো রাস্তার মোড় এলাকায় চোরসহ মোটরসাইকেলটি আটক করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে গত মে মাসে তিনি মোটরসাইকেলটি হাতে পেয়েছেন। হারানো মোটরসাইকেল ফিরে পাওয়ার আনন্দে তিনি গ্রামবাসীর জন্য ভোজের আয়োজনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল থেকে রান্নাবান্না শুরু হয়। তাঁর নিজের পুকুরের চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের বড় বড় মাছ ছিল এই ভোজে। গ্রামের গরিব-দুঃখী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার প্রায় দুই হাজার মানুষ এই ভোজে অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হক (৫৫) এই ভোজে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের দাম দেড় লাখ টাকা। এই ভোজেও প্রায় সমপরিমাণ খরচ হয়েছে। এটা কোনো ব্যাপার নয়। ব্যাপার হচ্ছে, হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায়। আল-আমিন সব সময় মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করেন। গ্রামে খেলাধুলা হলে তিনি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেন। ঈদ সামনে রেখে মোটরসাইকেল পাওয়ার অছিলায় তিনি মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন।
আল-আমিন সব সময় মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করেন। গ্রামে খেলাধুলা হলে তিনি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেন।
গ্রামের কৃষক মোখলেসুর রহমানও (৩৪) এই ভোজে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল-আমিন ভাই লাভ–ক্ষতির হিসাব করেন না। খুবই আমোদি মানুষ। মোটরসাইকেল পাওয়ার আনন্দেই তিনি ভোজের আয়োজন করেছিলেন। পুকুর থেকে বড় বড় মাছ ধরে রান্না হয়েছিল। সকাল থেকেই গ্রামে সাজ সাজ রব ছিল।’
গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস আলী (৫২) ছিলেন সেখানে। তিনি জানান, মেনু ছিল মাছের সঙ্গে আলুঘন্ট। এই খাবার মানুষ তৃপ্তিসহ খেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মাইকে বক্তব্য দেন আল-আমিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার হারানো মোটরসাইকেলটি আপনাদের দোয়ায় আমি ফিরে পেয়েছি। মোটরসাইকেলটির দাম হয়তো লাখ দেড়েক টাকা হবে। যেহেতু আপনাদের দোয়ায় আল্লাহপাক মোটরসাইকেলটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, সে জন্য আমি এই ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিই। এই গ্রামে সাতটি মসজিদ রয়েছে, গত শুক্রবার আমি এই সাতটি মসজিদেই দাওয়াত করেছি। সবাইকে বলেছি আমার অনুষ্ঠানে আসার জন্য। আর ঈদের এক দিন আগে আয়োজন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, গ্রামের অনেক ছেলেই বাইরে থাকে। কেউ ঢাকায় পড়াশোনা করে। ঈদের আগের দিন তারা সবাই বাড়িতে আসবে এবং তারা আমার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ জন্যই ঈদের এক দিন আগেই দিনটি ঠিক করা হয়েছে।’
আল-আমিন আরও বলেন, ‘এখানে দলীয় কোনো ব্যাপার নেই। কেউ আওয়ামী লীগ করবে, কেউ বিএনপি করবে, যার যা খুশি করবে, কিন্তু ন্যায়নীতি বলে একটা কথা আছে। আপনারা আমার পাশে থাকলে এই গ্রামের কোনো মানুষ অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারবে না। তবে আমি কোনো নেতা হতে চাই না। আমি আপনাদের সবার কাছে আল–আমিন হয়ে থাকতে চাই।’