ভবনটির ছাদসহ বিভিন্ন অংশে ফাটল। খসে পড়ছে পলেস্তারা। দরজা-জানালা ভাঙা। বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার খলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। আট বছর ধরে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আসছে। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।
এদিকে বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণকাজ চার মাসের বেশি সময় আগে শুরু করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়–সংলগ্ন মিলনপুর গ্রামের বাসিন্দা রতন চন্দ্র বর্মণ (৩৫) বলেন, ‘জানতাম পারছি এই স্কুলডার নতুন একটা বিল্ডিং অইব। কন্ট্রাকটার এক দিনের জন্যও এই হান আইছে না, কুনু মালামালও রাইখা গেছে না। মন অয় এইডা দেহার কেউ নাইগা।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টির আয়তন ৪০ শতক। একতলাবিশিষ্ট বিদ্যালয়টির ভবনের চারটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি শিক্ষকদের কক্ষ রয়েছে। চলতি বছরে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৫ জন। ২০২৩ সালে ছিল ৯২ জন এবং ২০২২ সালে ছিল ৯৬ জন। এই বিদ্যালয়ের চারটি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। প্রধান শিক্ষকের পদটি এক যুগের বেশি সময় ধরে শূন্য।
বিদ্যালয়টিতে তিনতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮ হাজার ১৮০ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় কিশোরগঞ্জের মেসার্স চ্যালেঞ্জার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভবন নির্মাণকাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৪ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের চার মাসের বেশি সময় পেরোলেও এখনো ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার কীর্তিবাস সরকার বলেন, ‘নানাবিধ ঝামেলায় যথাসময়ে ভবনটির কাজ শুরু করতে পারিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজটি শুরু করব।’
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ঠিকাদারকে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। সপ্তাহখানেকের মধ্য কাজ শুরু করবেন বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন।’
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে ৪৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। ভবনটির ছাদ ও বিভিন্ন অংশে ফাটল রয়েছে। দরজা-জানালা ভাঙা। ভবনের বিভিন্ন অংশ থেকে পলেস্তারা খড়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিপালী রানী বর্মণ, শিপন চন্দ্র বর্মণ, সৃষ্টি রানী বর্মণ ও অর্পিতা রানী বর্মণ জানায়, বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষের মেঝে পানিতে ভিজে যায়। এ সময় বই ও খাতাপত্র নিয়ে ভবনের এক কোণে জড়ো হয়ে তাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক গোপাল চন্দ্র বর্মণ (৪০) বলেন, ‘স্কুলডার বিল্ডিংডা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কহন কুন অ্যাকসিডেন্ট অয় এই জন্য পুলাপানরে স্কুলে পাডাইতে ভয় লাগে।’
সহকারী শিক্ষক পিংকি আক্তার বৃষ্টি বলেন, ‘বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘আট বছর ধরে আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভবনের পরিস্থিতি নাজুক থাকায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি।’
বিদ্যালয়টির অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনও বলেন, ‘ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমি এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি।’
এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম গতকাল শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবন নির্মাণকাজটি কেন যথাসময়ে শুরু করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’