দামি গাড়ির সামনে পদ্মা অয়েল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাছির উদ্দিন
দামি গাড়ির সামনে পদ্মা অয়েল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাছির উদ্দিন

২৪ লাখ টাকার গাড়িতে চড়েন পদ্মা অয়েলের কোটিপতি কর্মচারী

২৪ লাখ টাকা মূল্যের দামি গাড়িতে চড়েন তিনি। সম্পদের মধ্যে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের একটি কমিউনিটি সেন্টার। জমি রয়েছে আরও কোটি টাকার। এত সব সম্পদের মালিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নাছির উদ্দিন। তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ক্ল্যারিক্যাল সুপারভাইজার। পাশাপাশি তিনি কোম্পানিটির সিবিএর (যৌথ দর-কষাকষি প্রতিনিধি) সাধারণ সম্পাদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে নাছিরের অবৈধভাবে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য উঠে আসে। তিনি এসব সম্পদ যাতে হস্তান্তর–স্থানান্তর করতে না পারেন, এ কারণে গত মাসের শেষের দিকে ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সিবিএ নেতা নাছির উদ্দিনের ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পায় দুদক। তিনি এসব সম্পদ যাতে হস্তান্তর করতে না পারেন, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ারা, বিআরটিএ, চট্টগ্রামের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

দুদক জানায়, নগরের পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগদানের পর ১৯৮৬ সালে পিয়ন পদে তাঁর চাকরি নিয়মিত হয়। মূল বেতন ২৩০ টাকা। ২০১৪ সালে ট্যাংক-লরির হেলপার থেকে চেকার, পরের ছয় মাসের মাথায় সুপারভাইজার হিসেবে পদোন্নতি পান। পাশাপাশি সিবিএ সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন নাছির। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

অবৈধভাবে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ায় দুদক সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশ দেন নাছিরকে। ২০১৯ সালের ১২ মে তিনি সম্পদ বিবরণী জমা দেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে দুদক নাছিরের ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পায়। এই কারণে গত বছরের ২৩ নভেম্বর নাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। পরে এই মামলায় কারাভোগও করেন তিনি।

দুদক নাছিরের নামে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী এলাকায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা মূল্যের দোতলা একটি কমিউনিটি সেন্টার, একই উপজেলার চাতরী এলাকায় ৬৪ শতক জায়গা, ইউসিবিএল নগরের বহদ্দারহাট শাখায় ৩৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ১০ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিমা, ২৪ লাখ টাকার গাড়িসহ মোট ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পায় দুদক। পদ্মা অয়েলের কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি নিয়ে ঘুষ–বাণিজ্যের  মাধ্যমে এই টাকার মালিক হন নাছির।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত প্রথম আলোকে বলেন, সিবিএ নেতা নাছিরের আরও সম্পদ আছে কি না, তদন্ত করা হচ্ছে। অবৈধ যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে এগুলো যাতে হস্তান্তর করতে না পারেন, আদালত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ক্ল্যারিক্যাল সুপারভাইজার ও সিবিএ সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা করার, আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।’

দুর্নীতিবাজেরা নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে বলে মন্তব্য সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিবিএ নেতার আরও সম্পদ আছে কি না, যথাযথ তদন্ত করে বের করে আনতে হবে।