সিলেটে সাবেক মেয়রের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা মাইক নিয়ে রাস্তায়, হামলা–ভাঙচুর না করার আহ্বান

সিলেটের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাজনৈতিক নেতাদের বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে নেমেছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। তাঁরা একটি পিকআপে চড়ে মাইকযোগে প্রচার করছেন, ‘বাড়িঘর, অফিস-আদালত, দোকানপাটে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা তাঁদের উপাসনালয় রক্ষা করাও একজন সচেতন নাগরিকের কর্তব্য।’

আজ সোমবার রাত আটটার পর থেকে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরে এ প্রচারণা বের করা হয়। রাত সোয়া নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রচারণা চলছিল। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

প্রচারণা চলাকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাহের চৌধুরী শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সিলেটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়, একাধিক পুলিশ ফাঁড়িসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, প্রতিমন্ত্রী-এমপি-মেয়রের বাসভবন, আওয়ামী লীগের নেতা, সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরের বাসা-কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দোকান-প্রতিষ্ঠানে একের পর এক হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরই বিএনপি নেতারা পিকআপযোগে মাইকিংয়ে নামেন।

বিএনপি নেতাদের বহনকারী পিকআপটি নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকা ঘুরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছে।

মাইকযোগে প্রচারণাকালে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ দেশ আমাদের, নগর আমাদের। আমাদের সম্পদ কেউ নষ্ট করতে পারবে না। গত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীন ছিলাম। ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। এটাকে রক্ষা করতে হবে। কোনো দুর্বৃত্তের দুর্বৃত্তায়নের কারণে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা যাবে না। দুর্বৃত্তদের রুখতে হবে।’

বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব দৃর্বৃত্তপনা প্রতিহত করতে হবে। পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে এসব অপশক্তিকে রুখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সিলেটের ধর্মীয় সম্প্রীতি আর ঐতিহ্য নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না। যারা হামলা চালাচ্ছে, তারা গণতন্ত্রের দুশমন। তারা বিজয়কে কলঙ্কিত করতে চাইছে। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা বিএনপি পরিবার দুর্বৃত্তদের রোখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

যোগাযোগ করা হলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো অবস্থাতেই সম্প্রীতি ধরে রাখা হবে। এই সিলেট আমাদের। কোনো সম্পদ বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। কারও বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর কোনো সুস্থ রাজনীতি হতে পারে না। এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা নগরবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মাঠে নেমেছি। কেউ যেন অপকর্ম বা দুর্বৃত্তায়ন করতে না পারে, সে বার্তা আমরা মাইকযোগে দিচ্ছি।’

এদিকে রাত পৌনে আটটার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিলেটবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। তাঁরা বিবৃতিতে বলেন, ‘কোনোভাবেই কোনো সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, যানবাহন ও কোনো কিছুই ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ করা যাবে না। আমরা ইতিমধ্যেই খবর পেয়েছি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসীরা মুক্তিকামী জনতার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম শুরু করেছে। এদের প্রতিহত করতে হবে। যেখানেই এদের পাওয়া যাবে, সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।’

গণ–অভ্যুত্থানের বিজয় ছাত্র-জনতার উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বিজয় আমাদের শহীদদের উৎসর্গ করলাম। এই বিজয় ছাত্র-জনতার বিজয়। সবার সম্মিলিত আন্দোলনের কারণেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার পর সবাইকে শান্ত থাকতে হবে, কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। কারণ, স্বৈরাচার ও খুনি শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা ইতিমধ্যে মুক্তিকামী জনতার সাথে মিশে গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেছে। এদের থেকে সজাগ থাকতে হবে।’