শিখো-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা

‘তোমার আনন্দ যাতে অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়’

জিপিএ–৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনন্দঘন মুহূর্তটিকে মুঠোফোনে বন্দী করে রাখছে শিক্ষার্থীরা। আজ নারায়ণগঞ্জের ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ফটোফ্রেমে মুঠোফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত। কেউবা বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরে। মেতে ওঠে আড্ডায়-সেলফিতে। কেউ আবার গানের সঙ্গে নাচতে থাকে। এভাবেই নারায়ণগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে।

আজ শুক্রবার সকালে শহরের চানমারী এলাকায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকেরাও উৎসবে যোগ দেন। সকাল আটটা থেকে সংবর্ধনার নিবন্ধনের কার্ড নিয়ে মেয়ে ও ছেলেরা সারিবদ্ধভাবে মূল প্যান্ডেলের স্টলের সামনে লাইন ধরে। নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকসসহ উপহারসামগ্রী গ্রহণ করে।

সকাল সাড়ে নয়টায় ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রাসেল আদিত্য ও অর্থ সম্পাদক মৌন লাকির সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মণীন্দ্র কুমার রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হক।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য মণীন্দ্র কুমার রায় বলেন, ‘জীবনে তোমরা কখনো হতাশ হবে না। সব সময় বলবে, ভালো আছি। হতাশা থেকে ধীরে ধীরে মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার বেশি। তাই তোমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করতে হবে। জীবনে লক্ষ্য থাকাটা জরুরি। জীবনে তোমাদের সফলতা আসবেই। তোমাদের স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হবে। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাদক, মুখস্ত আর মিথ্যাকে না বলার শপথ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আজ নারায়ণগঞ্জের ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে

তিন ‘ম’–কে ভালোবাসতে হবে জানিয়ে তারিক মনজুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মা, মাতৃভূমি, মাতৃভাষা—এই তিনটিকে ভালোবাসতে হবে। জীবন আনন্দময়, জীবনকে কখনো নষ্ট কোরো না। মানুষ নানা কারণে জীবনকে বিতৃষ্ণ করে তোলে। জীবন থেকে পিছিয়ে পড়তে চায়। জীবনকে ভালোবাসতে হবে। পড়াশোনার চেয়েও জীবনে প্রথম প্রয়োজন হলো আনন্দ। জীবনকে আনন্দময় করে তোলো, তোমার সেই আনন্দ যাতে অন্যদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। আমরা অনেক শুনি, অনেক কিছু দেখি। অন্যদের সিদ্ধান্ত নিজের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দিই। এটা কখনো ভালো না। তুমি নিজের মতো দেখতে শেখো, নিজের মতো বুঝতে শেখো। শপথ নাও যে দায়িত্বে অবহেলা করব না। বাংলাদেশকে গড়ব।’

রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হয়নি, আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এই দেশকে আমরা শতকরা ৮০ জনের দেশ বানাতে পারিনি। দেশটা এখনো ক্ষুদ্র অংশের করায়ত্তে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা দেশে থাকতে চাইছে না। তারা দেশ থেকে বেরিয়ে বাঁচতে চাইছে। দেশ তো আমাদের মা। অন্যের হাতে আমাদের মাকে ফেলে যেতে পারি না। অবশ্যই শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবে, সেই শিক্ষা গ্রহণ করে আবার ফিরে আমাদের দেশটাকে প্রকৃত অর্থেই শতকরা ৮০ জনের দেশ বানাবে। পুরো দেশ তাকিয়ে আছে তোমাদের দিকে। এই স্বপ্ন তোমরাই বাস্তবায়ন করতে পারবে, আজ না হোক, কাল। অবশ্যই তোমরা তা করবে। তোমাদের স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে একদিন আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’

নারায়ণগঞ্জে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান গানে মাতিয়ে রাখেন শিল্পী মেহরীন মাহমুদ

সংবর্ধনায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে ‘না’ বলতে শপথবাক্য পাঠ করান নারায়ণগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম।

অতিথিদের বক্তব্য শেষে শিল্পী মেহরিন মাহমুদ গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়া ক্যামব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষক দ্বীপ সাহা সংগীত পরিবেশন করেন। স্কুলের সাংস্কৃতিক দল নৃত্য পরিবেশন করে। প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা মূকাভিনয় পরিবেশন করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা আদর্শ স্কুলের শিক্ষার্থী আতিফ বলে, ‘আমাদের এমন একটি আয়োজন করে সংবর্ধনা দেওয়ায় প্রথম আলোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমির শিক্ষার্থী সুমনা ফেরদৌসী বলে, ‘শিক্ষার্থীদের এই সংবর্ধনা উজ্জীবিত করবে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ হাজী মোহাম্মদ এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফারিহা বলেন, ‘সংবর্ধনার সুযোগে স্কুলের পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছি। হারিয়ে গিয়েছি আগের দিনগুলোয়। আমাদের সবাই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।’

সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। নারায়ণগঞ্জে এই উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে দেড় হাজারের বেশি কৃতী শিক্ষার্থী।

দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।