ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহজাহান আলমসহ তিন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজেই অনলাইনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে ই-মেইলে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
মঈন উদ্দিন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। এবারের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায় আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলে শাহজাহান আলম মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এখানে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাপার একটি অংশ তাঁকে মেনে নিচ্ছে না। এখানে জাতীয় পার্টির টানা দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত। জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মঈন উদ্দিনকে ঠেকাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর, তাঁর ছেলে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুরসহ সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সভা করে জিয়াউল হকের পক্ষে কাজ করছেন।
লিখিত অভিযোগে মঈন উদ্দিন উল্লেখ করেছেন, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী ও সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম তাঁকে হারাতে এককাট্টা হয়েছেন। তাঁরা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে দুই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ও মুঠোফোনে তাঁর কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এ জন্য তাঁর কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, যা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাই ইখতিয়ার উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ভীতি দেখানোসহ হুমকি আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হকের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। আচরণবিধি অনুযায়ী, তাঁরা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁরা বিভিন্ন অপপ্রচারও চালাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী বলেন, ‘অফিসের কাজে আমি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি এবং ব্যস্ত থাকি। অন্য কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না। তিনি (মঈন উদ্দিন) আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁর পক্ষে নির্বাচন করার জন্য বলেছিলেন। আমি তাঁর পক্ষে যাইনি।’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউল হক মৃধা ভালো লোক। তাই তাঁর পক্ষে নির্বাচন করছি। জিয়াউল হকের জনসভায় অনেক লোকজন হয়েছে বলে কলার ছড়ি প্রতীকের প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ। আমি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে এ রকম কোনো প্রচারণার সঙ্গে জড়িত না।’