যমুনা নদীতে নাব্যতাসংকটের কারণে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই প্রান্তে আটকা পড়া শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহনের চালক-সহকারী ও যাত্রীরা। সেই সঙ্গে সময়মতো গন্তব্যে পণ্য না পৌঁছানোয় আর্থিকভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবছর সাধারণত এ সময়ে যমুনায় নাব্যতাসংকট দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। তাঁদের মতে, আগে থেকে এ নৌপথ খনন করা হলে সংকট তৈরি হতো না। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে দুই দিন ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। প্রায় এক সপ্তাহ ফেরি চলাচল সচল থাকার পর গতকাল রাত থেকে আবারও ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস ধরে আরিচা ঘাটের অদূরে যমুনা নদীর ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায়ও ঝুঁকি নিয়ে ফেরি সচল রাখা হয়। সাতটি খনন যন্ত্র দিয়ে দিয়ে নৌপথ খনন করেও নাব্যতা ঠিক রাখা যাচ্ছে না। চলাচলরত ফেরি ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে চলাচল বন্ধ থাকছে। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল ফেরির চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে পাঁচটি ফেরি আছে। এসব ফেরি দিয়ে নৌপথটিতে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০টি যানবাহন পারাপার করা হয়। এসব যানবাহনের মধ্যে অধিকাংশই পণ্যবাহী। এ ছাড়া অল্পসংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহনও পারাপার হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেরি বন্ধ থাকায় আজ শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত আরিচা ঘাট এলাকায় বিভিন্ন পণ্যবাহী শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। তবে ফেরি বন্ধ থাকায় অনেক যানবাহন ঘুরে গিয়ে যমুনা সেতু হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। একইভাবে কাজিরহাট এলাকায়ও শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে সয়াবিন তেল নিয়ে পাবনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন ট্রাকচালক আবদুর রহিম। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আরিচা ঘাট এলাকায় আসেন তিনি। ফেরি বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার চিন্তা করছেন বলে আজ সকালে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই নৌপথে পাবনায় যেতে খরচ ও সময় কম লাগে। এ কারণে সহজে যাতায়াত করা যায় বলে আমরা এই নৌপথ ব্যবহার করি। কিন্তু ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।’
এমন অবস্থায় পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন। তাঁর ভাষ্য, যাত্রাপথে ফেরিঘাটে আটকে থাকায় নিজের পকেটের টাকা খরচ করে খেতে হচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটও আছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নাব্যতাসংকটের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এ সংকট দূর করতে সাতটি খননযন্ত্র দিয়ে নৌপথটিতে খননকাজ চলছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নৌপথটি ফেরি চলাচলে আবার উপযোগী হতে পারে।