হাওরের বিস্তৃত জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে কিশোরগঞ্জে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা। তবে অতিরিক্ত নৌকাভাড়ার কারণে অনেকেই পড়ছেন ভোগান্তিতে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকায় ভাড়া চাওয়া হয় আরও বেশি। এমনকি অটোরিকশা ও টেম্পোচালকেরাও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার নিকলী, মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও করিমগঞ্জে পর্যটকেরা বেশি আসেন। কয়েকজন পর্যটক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে মিঠামইন যেতে মাঝারি আকারের নৌকার ভাড়া দিতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আর বড় নৌকা ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আবার নিকলীর ছাতিরচরের করচ বন ঘুরে গেলে আরও অতিরিক্ত দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হয় পর্যটকদের। এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় ঘুরিয়ে এ ভাড়া আদায় করছেন নৌকার মালিকেরা। অথচ দূরত্ব অনুযায়ী একেকটি নৌকার আসা-যাওয়ার জন্য জ্বালানি তেল খরচ হয় সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার।
করিমগঞ্জের চামড়া বন্দর ও বালিখলা ফেরিঘাট থেকে ইটনা, মিঠামইন ও বাজিতপুরের পাটুলী ঘাট থেকে অষ্টগ্রাম আসা-যাওয়া করতেও অতিরিক্ত নৌকার ভাড়া দিতে হচ্ছে। নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকার নৌকার মালিক মোবারক হোসেন বলেন, তাঁর ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা। এ নৌকায় ৫০ থেকে ৭০ জন যাত্রী উঠতে পারেন। শুক্রবার নিকলী থেকে মিঠামইন যাওয়ার জন্য তিনি ভাড়া নেন ২০ হাজার টাকা। আবার নিকলীর ছাতিরচর করচ বন ঘুরে গেলে আরও দুই হাজার টাকা বেশি দিতে হয় তাঁকে। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিন কিছুটা কমে যেতে পারেন।
স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, নৌকার মালিকদের মতো সুযোগ হাতছাড়া করছেন না অটোরিকশা ও টেম্পোর (তিন চাকার বাহন) চালকেরাও। তাঁরাও হাওরের অলওয়েদার সড়কে আসা-যাওয়া করতে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। মিঠামইন থেকে ভাতশালা সেতু প্রায় ছয় থেকে সাত কিলোমিটারের দূরত্ব। স্বাভাবিক সময়ে অটোরিকশার ভাড়া ৪০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু শুক্র ও শনিবার এলেই ভাড়া হয়ে যায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ১৪ আসনের ৭০০ টাকার টেম্পোভাড়া হয়ে যায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ১০ বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন নিকলীর হাওরে। কিন্তু মাত্র চার ঘণ্টা ঘোরার জন্য নৌকাভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আবার অলওয়েদার সড়কে নেমে অটোরিকশা ও টেম্পোভাড়া দিতে গিয়েও পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। পাঁচ-ছয় কিলোমিটার রাস্তা ঘোরার জন্য দিতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এত দূর থেকে ঘুরতে এসে কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে দিতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। এ বিষয়ে অবশ্যই প্রশাসনের নজর রাখা উচিত।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর থেকে আসা পর্যটকেরা ভোগান্তিতে পড়বেন, এটা তিনি চান না। পর্যটকদের জিম্মি করে নৌকার মালিকসহ অটোরিকশা ও টেম্পোচালকেরা যেন কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে। পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রয়োজনে নৌকাভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।