বগুড়ায় থানায় হামলার ঘটনায় ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধানের আরও এক সহযোগী গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলায় জড়িত সন্দেহে ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মো. নুরুজ্জামানের আরও এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শাকিল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁকে বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

তবে মামলার এজাহারে শাকিল মাহমুদের নাম নেই। তদন্তে নাম আসায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে শাজাহানপুর থানায় হামলার মামলা ও অস্ত্র আইনে করা দুটি মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার শাকিল মাহমুদের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার জোকা গ্রামে। তিনি উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গ্রেপ্তার শাকিলকে আজ শনিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে থানায় হামলার মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। আগামীকাল রোববার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩–এর বিচারক বেগম সঞ্চিতা ইসলাম। নতুন করে যে তিনজনের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মো. নুরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যবসায়িক অংশীদার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪০), মোস্তাইল গ্রামের সুজন ইসলাম (২২) ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য রাসেল আলী (৩৪)।

পৃথক দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধান আসামি নুরু বাহিনীর প্রধান মো. নুরুজ্জামানকে আজ ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁর আট সহযোগীর প্রত্যেককে একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলেও এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শুরুই করতে পারেনি ডিবি।

এর আগে গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩-এর বিচারক বেগম সঞ্চিতা ইসলাম দুই মামলায় নুরুজ্জামানকে ছয় দিন এবং আগে গ্রেপ্তার আটজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মো. নুরুজ্জামান শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। ৬ এপ্রিল রাতে শাজাহানপুর থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মূল আসামি তিনি। ঘটনার পর নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ ২টি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪৫ জনকে আসামি করে পৃথক আইনে দুটি মামলা হয়। দুটি মামলারই প্রধান আসামি নুরুজ্জামান।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নুরুজ্জামানসহ গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে ৯ জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। নুরুজ্জামান ছাড়া রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মিঠুন হাসান, কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও মিঠুন মিঞা।

নতুন গ্রেপ্তার হওয়া শাকিল মাহমুদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মুস্তাফিজ হাসান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, থানায় হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের পৃথক দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নুরুজ্জামানকে ছয় দিনের এবং অন্য আটজনের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। নুরুজ্জামানকে আজ কারাগার থেকে ডিবিতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া নতুন করে আরও তিন আসামির সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় হামলা এবং পরে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুই নেতার বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মামলা দুটির তদন্তভার থানা-পুলিশের কাছ থেকে ৯ এপ্রিল ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল ডিবির উপপরিদর্শক আবু জাফরকে থানায় হামলা মামলার এবং উপপরিদর্শক আশিকুর রহমানের ওপর অস্ত্র মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।