অধিক মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রুরাল অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট (বরসা) নামের একটি এনজিওর কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কয়েক শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে কয়েক শ গ্রাহক আজ বুধবার বরসার মালিকাধীন একটি হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
বরসার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বরসা একটি ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে বরসা সাতক্ষীরা জেলায় কার্যক্রম শুরু করে। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় তাদের সাতটি শাখা রয়েছে। এসব শাখায় গ্রাহকসংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজার। গ্রাহকদের এসব শাখায় জমা রয়েছে প্রায় সোয়া ৪০০ কোটি টাকা।
তবে বরসার গ্রাহকদের দাবি, তাঁরা বরসার ওই সব শাখায় কেউ পাঁচ বছর আগে, আবার কেউ আট বছর আগে থেকে টাকা জমা রেখেছেন। পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ হবে—এই প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বরসার মাঠকর্মীরা টাকা আনেন। একেকজনের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকেরা মুনাফাসহ বরসার ওই সাতটি শাখায় ৮০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি টাকা পাবেন।
গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বরসার নির্বাহী পরিচালক আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে আজ বুধবার রাতে ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আশাশুনি উপজেলার বদরতলা গ্রামের পম্পা রায় বলেন, তিনি মেয়ে বিয়ের দেওয়ার জন্য সাত বছর আগে চার লাখ টাকা বরসার বদরতলা শাখায় জমা দিয়েছিলেন। পাঁচ বছরে জমা দেওয়া টাকা দ্বিগুণ দেওয়া হবে বলে তাঁকে জানানো হয়। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা না দিয়ে টালবাহানা শুরু করেন বরসার কর্মকর্তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল গ্রামের ভারতি রানী বলেন, জমি বিক্রি করে পাঁচ লাখ পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আট বছর আগে বরসায় জমা রেখেছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আর টাকা না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে বরসার লোকজন। একই গ্রামের শ্রমিক হাসানুজ্জামান জানান, তিনি শ্রমিকের কাজ করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। সাত বছর আগে তিনি ওই টাকা টাকা বরসার কালীগঞ্জ শাখায় জমা রাখেন। পাঁচ বছর শেষ হওয়ার পরেও তিনি টাকা ফেরত পাননি।
স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক শ গ্রাহক গতকাল দুপুর ১২টার দিকে টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে সাতক্ষীরা শহরের তালতলা এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যান। সেখান থেকে বলা হয় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের পলাশপোল এলাকায় অবস্থিত বরসার মালিকানাধীন চায়না-বাংলা (সিবি) হাসপাতালে তাঁরা হামলা চালান। এই সময় তাঁরা ওই হাসপাতালের ওষুধ বিক্রির দোকান এবং নিচতলায় ভাঙচুর চালান।
হামলা চালানোর খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এই সমস্যা সমাধানে পরে সেনাসদস্যরা সিবি হাসাতাল ও বরসার নির্বাহী পরিচালক আশিকুর রহমান ও কয়েকজন গ্রাহককে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, গ্রাহকদের পাওনা টাকার বিষয়টি নিয়ে আজ তাঁর (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে) সভা হয়। এতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, সিবি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক আশিকুর রহমান ও কয়েকজন গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। সভায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে বরসার যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাতক্ষীরার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সন্তোষ কুমার নাথকে প্রধান করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।