পাবনা জেলা শহরের রূপকথার সড়কে একটি বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে পাঁচবার গোলাগুলি, ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি, সড়কের স্বাগতম চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ও পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বারবার এই গুলির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় চারটি মামলা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রতিপক্ষের লোকজন জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে সাজ্জাদ হোসেন আবারও ফাঁকা গুলি চালিয়েছেন। পুলিশ ব্যবসায়ী নেতা সাজ্জাদ হোসেনের লাইসেন্স করা অস্ত্রটি জব্দ করেছে।
পাবনা সদর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রূপকথা সড়কের একটি জমি নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে সাজ্জাদ হোসেন ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলামের বিরোধ চলছিল। জমিটি নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। এর মধ্যেই ২০০৫ সালে প্রথম দফায় শরিফুলের লোকজন জমিটি দখল করতে আসেন। এ সময় সাজ্জাদ তাঁদের ওপর গুলি চালান। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা রয়েছে। পরে ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০১৮ সালের ৬ মার্চ একই ঘটনা ঘটে। ২০১২ সালে দুই দফা গোলাগুলি ও পুলিশ অ্যাসাল্ট হয়। এরপর ২০১৮ সালে একই ঘটনার আবারও একই ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, পুলিশ অ্যাসাল্ট ও মারামারির আরও তিনটি মামলা রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল মারা যান। এরপর থেকে সাজ্জাদ বিরোধপূর্ণ জমিটি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে শরিফুলের ভাইয়েরা জমিটিতে থাকা দোকানঘর মেরামতের উদ্যোগ নেন। গতকাল বিকেলে তাঁরা দোকান মেরামতের কাজ শুরু করলে হঠাৎ করেই সাজ্জাদ ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করেন। এতে পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। গুলিতে সড়কে থাকা ইউনিভার্সাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রূপকথার কাব্যর কাচ ভেঙে যায়। পরে শরিফুলের স্বজন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সাজ্জাদকে ধাওয়া দিলে তিনি নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউনিভর্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপক ফয়সাল মুর্শেদ বলেন, তিনি (সাজ্জাদ হোসেন) নিজের প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অতর্কিত গুলি ছুড়তে থাকেন। গুলিতে রূপকথা সিনেমা হল ও রূপকথার কাব্যর কাচ ভেঙে আতঙ্ক তৈরি হয়। তাঁদের কর্মীরা ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটকে থাকেন। ঘটনায় তাঁদের প্রতিষ্ঠান ইউনির্ভাল গ্রুপের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে শরিফুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মধুমিতা হোটেলের জায়গাটি আমার ভাইয়ের। বৈধ কাগজপত্রসহ আমাদের দখল স্বত্ব রয়েছে। এরপরও সাজ্জাদ জমিটি নিজের দখলে রাখতে চান। তাঁকে বারবার দলিলপত্র নিয়ে বসার কথা বললেও তিনি রাজি হননি। ফলে গতকাল আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েই দোকান সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনি গুলি চালান।’
এ প্রসঙ্গে জানতে ব্যবসায়ী নেতা সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
তবে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধপূর্ণ জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। এরপরও সাজ্জাদ সাহেব দাম্ভিকতার দাপট দেখাতে কয়েকবার গুলির ঘটনা ঘটিয়েছেন। পূর্বের সব ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গতকালের ঘটনায় তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর লাইসেন্সকৃত বন্দুকটি জব্দ করা হয়েছে। অস্ত্রটির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হবে।