মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার নিচু এলাকা থেকে এখনো বন্যার পানি নামেনি। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এখনো ডুবে আছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার দুপুরে দেখা যায়, জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের নূরপুর এলাকায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের ওপর টিন-বাঁশের দুটি ঘর। সেখানে কয়েকটি গরু, ছাগল ও ভেড়া বেঁধে রাখা। সেখানে গবাদিপশু পাহারা দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপু দাস (৪৫)।
দীপু বন্যাকবলিত বাড়ি দেখিয়ে বললেন, ‘২০-২২ দিন ধরি পানির মধ্যেই আছি। আকাশ অউ ভালা, অউ খারাপ অবস্থা। পানি একটুক কমে আবার একটুক বাড়ে। কষ্টর সীমা নাই আমরার। কবে যে এই দুর্গতি কাটবে, একমাত্র ভগবানেই জানইন।’
দীপু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাই স্থানটি উঁচু থাকায় বাড়িতে পানি ওঠার পর পরই গবাদিপশু এখানে নিয়ে আসেন। টিন-বাঁশের অস্থায়ী ঘর তুলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। চোরের ভয়ে গবাদিপশুদের সঙ্গেই রাত কাটান।
জুড়ীর ভূঁয়াই বাজার এলাকায় মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী খেয়াঘাট গড়ে উঠেছে। সেখানে ১০-১২টি নৌকা বেঁধে রাখা। সেখান থেকে নৌকায় করে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আশপাশের বাহাদুরপুর, শাহপুর, ভাটি শাহপুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকার লোকজন এখনো পানিবন্দী। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। নৌকা ছাড়া এসব এলাকায় যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। জরুরি নানা প্রয়োজনে লোকজনকে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। অনেকে ব্যক্তিগত নৌকায় করে চলাচল করেন। আর যাঁদের নৌকা নেই, তাঁরা ভাড়ায়চালিত নৌকায় চলাচল করেন। এসব নৌকায় করে মালামালও পরিবহন করা হয়।
কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সসহ আশপাশের কুলাউড়া পৌর শহরের মাগুরা, সাদেকপুর ও বিহালা এলাকা এখনো ডুবে আছে। জুড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরেও দেড় থেকে দুই ফুট পানি। দুটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাজে আসা লোকজনকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুটি উপজেলার অর্ধশতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো জলমগ্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রচুর পলি আসছে। নদ-নদী, হাওর, খাল, বিল ভরাট হচ্ছে। পানির ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়মিত পুনঃখনন করতে হবে। এ ছাড়া পানি প্রবাহের বাধাগুলো চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।