জরাজীর্ণ বসতঘরের দুটি কক্ষই কাদায় ভরা। এমন অবস্থায় ওই ঘরে পরিবার নিয়ে থাকছেন শিমু দে। গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের পেয়ার মোহাম্মদ বাড়ি এলাকায়
জরাজীর্ণ বসতঘরের দুটি কক্ষই কাদায় ভরা। এমন অবস্থায় ওই ঘরে পরিবার নিয়ে থাকছেন শিমু দে। গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের পেয়ার মোহাম্মদ বাড়ি এলাকায়

ঘরের সবখানেই কাদা আর ভেজা স্যাঁতসেঁতে

জরাজীর্ণ বসতঘর। দুটি কক্ষেই স্যাঁতসেঁতে কাদা। একটি কক্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঘরের জিনিসপত্র। সেখানে মা, স্বামী ও এক শিশুসন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে রাত কাটাচ্ছেন শিমু দে। গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ বাড়ি এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

সম্প্রতি বন্যায় শিমু দের বসতঘর পানিতে ডুবে যায়। সে সময় পরিবার নিয়ে তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য সেকান্দরের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত বুধবার বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়িতে এসে দেখেন ঘরগুলো সব লন্ডভন্ড। শিমু দের মতো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার বন্যাকবলিত অসংখ্য মানুষ। বিধ্বস্ত ঘরে ফিরতে না পারায় অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন অনেকেই।

শিমু দে বলেন, ‘আমার নিজের কোনো বসতঘর ও জমিজমা নেই। অন্যজনের ঘরে থাকেন তিনি। বন্যার পর সেই ঘরেও আর বসবাস করার জো নেই। টানা বৃষ্টিতে ইছামতী নদীর পানি গ্রামে ঢুকে নিচু এলাকার সব বসতঘর ডুবে যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তাঁর স্বামী কার্তিক দে। গ্রামের চা–দোকানে চাকরি করে যে অল্প আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে চলতে হয়। ঘর মেরামতে সরকারি সাহায্য ছাড়া আর উপায় নেই তাঁর।’

অনেকটা নিরুপায় হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে স্যাঁতসেঁতে কর্দমাক্ত ঘরে থাকছেন হোছনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর মো. হারুন। জিনিসপত্র পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত করার মতো সামর্থ্যও তাঁর নেই বলে জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সেকান্দর বলেন, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গ্রামের সব কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ঘর মেরামত করতে পারছে না।

ঘর মেরামতে সহযোগিতার কথা জানিয়ে প্রথম আলো রাঙ্গুনিয়া বন্ধুসভার সভাপতি এম মোরশেদ আলম বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকার বাড়িঘরের অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এসেছি। অনেকেই করুণ অবস্থায় ঘরে রাত কাটাচ্ছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘর মেরামতে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল কান্তি চাকমা জানান, উপজেলায় ১০টি কাঁচা ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও ১৫০টি কাঁচা ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সংখ্যা যা–ই হোক ঘরবাড়ি মেরামতে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, বন্যার সময় বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে তাৎক্ষণিক শুকনো খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করা হয়। এখন ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত এবং অনেক পরিবারের পুনর্বাসন দরকার। দুস্থ ও অসচ্ছল পরিবারের পুনর্বাসন বা ঘর মেরামতে সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে।