বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

সচেতনতার বিকল্প নেই

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা নেয় প্রায় ৮০০ জন।

থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া

ময়মনসিংহ জেলায় কতজন থ্যালাসেমিয়া রোগী আছেন, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে। থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও জোরদার নয়। তবে নানা প্রয়োজনে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা রোগীদের বিনা মূল্যে রক্তদানের জোগাড় করে দেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

আজ রোববার ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। জেলায় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি (রক্ত রোগ) বিভাগে। দিবসটি উপলক্ষে বিভাগটি শোভাযাত্রা বের করবে। পাশাপাশি একটি সেমিনারে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় নতুন সংযোজন হওয়া একটি ওষুধ নিয়ে আলোচনা হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচি পালন করবে।

সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে হবে। তবে দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা এখনো পাননি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিসংখ্যান রয়েছে। প্রয়োজন হলে তাঁরা সেটা সংগ্রহ করেন।

গতকাল রোববার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. হাবিবুর রহমান জানান, হাসপাতালে নিয়মিত থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা নেয় প্রায় ৮০০ জন রোগী। এর মধ্যে ৫৫০ জন রোগী নিবন্ধিত। বাকিরা নিয়মিত চিকিৎসা নিলেও এখনো নিবন্ধন করাননি।

* থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে বংশনাক্রমিক রক্তরোগ। রক্তে হিমোগ্লোবিনের চেইন কম তৈরি হওয়া বা অনুপস্থিতির কারণে এ রোগ হয়। * যদি ছেলে ও মেয়ে উভয়েই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হন তাহলে তাঁদের বিয়ে হওয়া উচিত নয়।

মো. হাবিবুর রহমান আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে বংশনাক্রমিক রক্তরোগ। রক্তে হিমোগ্লোবিনের চেইন কম তৈরি হওয়া বা অনুপস্থিতির কারণে এ রোগ হয়। এ রোগ নির্মূলে প্রধান উপায় সচেতনতা। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার করে নেওয়া উচিত। যদি ছেলে ও মেয়ে উভয়েই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হন তাহলে তাঁদের বিয়ে হওয়া উচিত নয়। দেশে এখনো এ চর্চা শুরু হয়নি। আবার কখনো কখনো যদি কোনো অবিবাহিত মেয়ের থ্যালাসেমিয়ার বাহক হিসেবে শনাক্ত হয়, তাহলেও হয়তো সেটি গোপন করা হয়।

নগরের বাসিন্দা দেবশ্রী রায়ের বয়স এখন ২৯ বছর। ৪ বছর বয়স থেকেই তিনি থ্যালাসেমিয়ায় রোগে আক্রান্ত। শুরুতে চার থেকে পাঁচ মাস পর রক্ত নিতে হতো। তবে এখন প্রতি মাসেই নিতে হচ্ছে। ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বিনা মূল্যে রক্ত নিতে পারছেন তিনি। দেবশ্রী জানান, আগে তিনি একটি চাকরি করতেন। চাকরি করতে হলে তাঁকে মাঠপর্যায়ে যেতে হতো। শারীরিকভাবে এখন আর শক্তি না পাওয়ায় চাকরিটিও ছেড়ে দিতে হয়েছে।

নগরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহে বর্তমানে অন্তত ৪০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। পাশাপাশি ২০২১ সালে ময়মনসিংহ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটি গঠিত হয়েছে। এ সোসাইটি রক্তদানের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া সচেতনতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে যাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চাওয়া থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ। স্বেচ্ছায় রক্তদানের কাজ করতে গিয়ে আমাদের মাথায় প্রথমে এ ভাবনা আসে। শুরুতে দেখা যেত, ময়মনসিংহের তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর ৯৫ শতাংশই থ্যালাসেমিয়ার বিষয়টি জানত না। আমরা প্রথমেই তাঁদের সচেতন করেছি। ময়মনসিংহে বর্তমানে ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। তাঁদের মাধ্যমে আমরা ময়মনসিংহ জেলায় সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেব।’

ময়মনসিংহ থ্যালাসেমিয়া সোসাইটির কিছু দাবিও সামনে এনেছে। তাঁরা সরকারের মাধ্যমে এসব দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চান। দাবিগুলো হচ্ছে, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। সচেতনতা বাড়ানো জন্য স্কুলপর্যায়ে পাঠ্যবইয়ে থ্যালাসেমিয়ার বিষয়ে উল্লেখ থাকা।