হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, দুদকের মামলা

দুর্নীতি
প্রতীকী ছবি

চেকটি ছিল মাত্র ৪ হাজার টাকার। তাতে স্বাক্ষর করেন মেয়র ও সচিব। কিন্তু ৪-এর বাঁয়ে ‘২০০’ বসান গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন। এরপর তা আর ‘মাত্র’ থাকে না। হয়ে যায় ২০ লাখ ৪ হাজার টাকা। এভাবে প্রায় ৫ মাসে পৌনে ৩৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। এর মধ্যে আত্মসাৎ করেন ৩১ লাখ টাকা। দুদকের তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়। আত্মসাৎ করা টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত দেন আলমগীর।

এ ঘটনায় হিসাবরক্ষক আলমগীরের বিরুদ্ধে গত রোববার মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় দুদক রংপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান বাদী হয়ে তাঁর কার্যালয়ে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পলাশবাড়ী পৌরসভার প্রধান সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন (৪৭)। তাঁর বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায়। তিনি উপজেলার তেঘরী গ্রামের আমদাদ হোসেনের ছেলে। তিনি ২০২১ সালের ১১ মে থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখা থেকে ১৬টি চেকে অতিরিক্ত সংখ্যা বসিয়ে ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত তোলা ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

ঘটনাটি অনুসন্ধান করে দুদক রংপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়। অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, পলাশবাড়ী পৌরসভা শিরোনামে সোনালী ব্যাংক পলাশবাড়ী শাখায় দুটি হিসাব চালু রয়েছে। হিসাবটি পৌরসভার মেয়র ও সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। প্রধান সহকারী আলমগীর হোসেন হিসাব দুটির চেক রেজিস্টার সংরক্ষণ, নোটশিট প্রস্তুত, উত্তোলন চেক লেখা, ব্যাংক লেনদেন সম্পাদন ও লেনদেনসংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র হেফাজতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পৌরসভার হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের নোটিশ বহি ছাপানো বাবদ 8 হাজার টাকার বিল পরিশোধের জন্য ২০২১ সালের ১১ মে নোটশিটে উপস্থাপন করেন। সচিব এবং মেয়র অনুমোদন করে উত্তোলন চেকে সই করেন। ওই চেকের মুড়ি বইয়ে এবং চেক রেজিস্টারে চেকের বাহক হিসেবে মো. শিপনের নামে ৪ হাজার টাকা উত্তোলনের বিবরণ লেখা রয়েছে।

ব্যাংক থেকে সংগৃহীত উত্তোলন চেকের অপর পৃষ্ঠায় উত্তোলনকারী হিসেবে মো. শিপন নাম লেখা থাকলেও আলমগীর হোসেনের মুঠোফোন নম্বর লেখা রয়েছে।
উত্তোলন চেকে মেয়র ও সচিবের সইয়ের পর আলমগীর হোসেন ৪-এর বাঁয়ে ‘২০০’ বসিয়ে এবং কথায় ২০ লাখ চার হাজার টাকা লিখে উত্তোলন করেন। একইভাবে তিনি একটি হিসাব থেকে ১২টি চেক এবং আরেকটি হিসাব থেকে ৪টি চেক প্রস্তুতকালে টাকার পরিমাণ অঙ্কে ও কথায় লেখার আগে ফাঁকা রেখে মেয়র ও সচিবের সই নেন। মেয়র ও সচিবের সইয়ের পর পরিকল্পিতভাবে রাখা ফাঁকা স্থানে অতিরিক্ত সংখ্যা বসিয়ে ও কথায় লিখে ১৬টি চেকে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ টাকার স্থলে মোট ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ টাকা উত্তোলন করেন। অতিরিক্ত উত্তোলন করা ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর আলমগীর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর আত্মসাৎ করা টাকা পৌর তহবিলে জমা করেন।

মামলার বাদী আবু হেনা আশিকুর রহমান গত সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান, আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ওই মামলা করা হয়।

জানতে চাইলে সোমবার পলাশবাড়ী পৌরসভার মেয়র গোলাম সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, একটি ফৌজদারি মামলায় ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর আলমগীর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ সময় তাঁর কক্ষের আলমারি থেকে ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর সন্দেহবশত পৌরসভার ফাইলপত্র ও চেকবই যাচাই–বাছাই করে দেখা যায়, তিনি অতিরিক্ত ৩১ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ১৫ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলে চাপে ফেলে তাঁর কাছ থেকে পুরো টাকা আদায় করা হয়।

মেয়র বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার দিনই পৌরসভার চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ৬ অক্টোবর বরখাস্ত করার বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ শাখার উপসচিবকে জানানো হয়। এখন তিনি সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেক লিখতে ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে আমি পুরো টাকাই ফেরত দিয়েছি।’