ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত পানিনিষ্কাশন ও জোয়ারাধার চালুর দাবি

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে পানির মধ্য দাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি।আজ বুধবার দুপুরে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মশিয়াহাটী ডিগ্রি কলেজের মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিন দফা দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। আজ বুধবার দুপুরে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মশিয়াহাটী ডিগ্রি কলেজের জলাবদ্ধ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানায়।  

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির দাবিগুলো হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে টিআরএম-টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু করা, আমডাঙ্গা খাল দ্রুত সংস্কার এবং ভবদহের জলাবদ্ধতার সসম্যা সমাধানের নামে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ চক্রের সদস্যদের বিচার করা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে এসব দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় আগামী ৫ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবদুল হামিদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ দীর্ঘ ৪৪ বছর স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ভবদহ স্লুইসগেট, পোল্ডার, নদী-পানি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ এর কারণ। এই জনপদে ভবদহ স্লুইসগেট একটি মরণফাঁদ। এর কোনো কার্যকারিতা নেই, নেই পানিনিষ্কাশনের ক্ষমতা।

২০০ থেকে ৩০০ ফুট প্রস্থ ও সুগভীর নদী ভরাট হয়ে পানি বহনের ক্ষমতা হারিয়েছে। বর্তমানে নদীর প্রস্থ কমে ১৫ থেকে ২৫ ফুট হয়েছে। ৪৪ বছরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সংস্কারের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদার চক্রের লুটপাটের সুবিধার্থেই তা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত। এলাকার জনগণের আবাদি ফসল, বসতঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। পানিতে ডুবে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এলাকা প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য হারিয়েছে। অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই দায় সরকারের।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থানীয় জনগণ উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণ–আন্দোলনের চাপে গৃহীত হলেও বিগত সরকার ২০১২ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অজুহাতে তা বাতিল করে দেয়। ওই হামলা হয়েছিল স্বপন ভট্টাচার্যের প্রত্যক্ষ সহায়তায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি, বরং তাঁকে (স্বপন ভট্টাচার্য) এমপি-মন্ত্রী বানানো হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এই জনপদের গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গেছে। মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর শুধু নয়, জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া ও যশোর শহর পর্যন্ত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে জানিয়ে আসছি যে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে খুলনার বারোআওড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকার চার শতাধিক গ্রাম, আবাদি ফসল, বসতঘর, বাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, শ্মশান, ব্যবসা-বাণিজ্য পানির তলে চলে যাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার স্মারকলিপি পেশ, অনুরোধ করলেও লুটেরা সিন্ডিকেটের স্বার্থে আমাদের কথা কর্ণপাত করা হয়নি। উপরন্তু দুর্গত শত শত নারী–পুরুষকে লাঠিপেটা ও রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমরা যে বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা বলে আসছিলাম, সে ঘটনাই ঘটে চলেছে।’ অর্থাৎ তিনটি উপজেলার ১০০টি গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যশোরের ভবদহ অঞ্চলের নদী, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও জনপদকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে ৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড অর্বাচীনের মতো মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ও সেচনির্ভর হয়ে বাস্তবতা ও গণবিরোধী অবস্থানেই রয়েছে। আমডাঙ্গা খাল দিয়ে পানিনিষ্কাশন করা সম্ভব হলেও সে খাল সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সদস্য অনিল বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন, শিবপদ বিশ্বাস, পলাশ বিশ্বাস, সুকৃতি বিশ্বাস, উৎপল বিশ্বাস, শেখর বিশ্বাস, মহির উদ্দিন, রাজু আহমেদ, আজিজুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।