ফরিদপুরে এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অপরাধে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শিহাবুল ইসলাম আজ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর সদরের লোকমান খাঁর ডাঙ্গী এলাকার মো. আছমত শেখ (১৯) ও মো. সাগর মোল্লা (২২)। হত্যাকাণ্ডের শিকার স্কুলছাত্রের নাম সাব্বির বিশ্বাস (১৪)। সে ফরিদপুর সদরের চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের আছরউদ্দিন মুন্সিডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর বিশ্বাসের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাঁদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
স্কুলছাত্র সাব্বির বিশ্বাসকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিযোগে হওয়া মামলায় আসামিদের দণ্ডবিধির দুটি ধারায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং দণ্ডবিধির ৩৯৪ ধারায় দস্যুতা করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেওয়ার দায়ে ওই দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাব্বির বিশ্বাসের বাবা আলমগীর বিশ্বাস ঘোড়ার গাড়ি ও ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর চার ছেলের মধ্যে সাব্বির মেজ। সে এলাকার পদ্মার পাড় উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাবার ইজিবাইক চালিয়ে পড়াশোনাসহ নিজের হাতখরচ চালাত। ২০২২ সালের ১ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সাব্বির ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন সকাল আটটার দিকে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নে রদয়ারামপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের বাড়ির কাছে একটি খেত থেকে দুই হাতা ও দুই পা বাঁধা এবং গলায় কালো রঙের কাপড় দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ এপ্রিল সাব্বিরের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় হত্যা ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিযোগে একটি মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত করে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল মো. আছমত শেখ ও মো. সাগর মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, দেশে চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ রায় সে ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য হত্যার মতো অপরাধমূলক ঘটনা কমে আসবে।