চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের উদ্যোগে ‘সুফল’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে দুই বছর মেয়াদি একটি গবেষণা হয়েছে। উদ্যানটিতে বিপন্ন ভোঁদড়, মথুরাসহ অতিবিপন্ন বনছাগলের দেখা মিলেছে। বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের আওতায় বন্য প্রাণীর ওপর যে গবেষণা হয়েছে, তার প্রধান ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান। গবেষণার বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।
বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে যে জরিপ বা গবেষণাটি করা হয়েছে, তার শুরুটা কবে? কতজন এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট?
কামরুল হাসান: গবেষণাটি সুফল প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গবেষণা করা হয়েছে। এই গবেষণায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চারজন গবেষক এবং স্নাতকোত্তরের ছয়জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
এই গবেষণায় কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে?
কামরুল হাসান: এই গবেষণায় বেশ কিছু বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লাইনট্রানজেক্ট, কোয়ারে ডরিট ও ক্যামেরা ট্র্যাপিং। তবে এই গবেষণায় বিশেষত ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ক্যামেরাগুলো ২৪ ঘণ্টা অ্যাকটিভ থাকে। ১০টি ক্যামেরা ট্র্যাপ বনের ৪৮টি স্থানে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি ও ভিডিও দেখে প্রধানত গবেষণা এগোতে থাকে।
গবেষণায় বারৈয়াঢালা উদ্যানে জীববৈচিত্র্যের সার্বিক চিত্র কেমন দেখলেন?
কামরুল হাসান: উদ্যানের সার্বিক পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। এখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্তন্যপায়ী প্রাণী, মহাবিপন্ন বনছাগল, প্রচুর পরিমাণে পাখি, উল্লুক, মথুরা ও বনমোরগও দেখা গেছে। এদের অবস্থা বেশ ভালো। আর এখানে ঝরনা থাকাতে ঝরনার পরিবেশে বসবাসকারী ব্যাঙ, সাপ ও বিপন্ন ভোঁদড়সহ অন্যান্য প্রাণী বেশি দেখা গেছে।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
কামরুল হাসান: বাংলাদেশে বনছাগল নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। লোকমুখে শোনা যেত যে তারা মাঝেমধ্যে বনছাগল দেখেছেন। তো কী পরিমাণ বনছাগল আছে বা আদৌ আছে কি না, সেটা জানাও গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশে কী পরিমাণ বনছাগল আছে?
কামরুল হাসান: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে বনাঞ্চল আছে, সেখানে কিছু বনছাগল আছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। বনছাগল মহাবিপন্ন প্রাণী। বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে কী পরিমাণ বনছাগল আছে, সেটি নিরূপণে আমরা ডেটা অ্যানালাইসিস করছি এখনো। এটা শেষ হলে অফিশিয়ালি জানাতে পারব।
বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বনছাগল দেখা যেত?
কামরুল হাসান: সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ বন অঞ্চলে এটি দেখা যেত। এদের আচরণগত কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এরা খাড়া পাহাড়ে উঠতে পারে এবং সেখানে আবাসস্থল গড়তে পারে। শিকারের কারণে বনছাগল কমে গেছে।
দিন দিন বন্য প্রাণী কমে যাওয়ার কারণ কী? এদের সংরক্ষণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা কেমন?
কামরুল হাসান: সার্বিকভাবে বন্য প্রাণী কমে যাওয়ার কারণ মূলত আবাসস্থল ধ্বংস এবং অবৈধ পশু শিকার। পাহাড়ি অঞ্চলে জুমচাষ করার জন্য সেখানে আগুন লাগানো হয়। এতে অনিয়ন্ত্রিত আগুনটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারণ, আগুনের উত্তাপে পশুগুলো বের হলেই শিকার করা হয়। বন্য প্রাণী দেখভালের দায়িত্ব মূলত বন বিভাগ করে থাকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন বিভাগের অফিস আছে, কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংঘবদ্ধ চক্র মিলে গাছ কাটা এবং পশু শিকার করে থাকে। এতে বন্য প্রাণী কমে। বন বিভাগ যদি স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এটি তদারকি করে, তাহলে এই অপরাধ কমে যাবে বলে মনে করি।