বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় যুবদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। যুবদলের অভিযোগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, কাসেমাবাদ, উত্তর বিজয়পুর, বাটাজোরসহ বিভিন্ন এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত চারজন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত অন্য নেতা-কর্মীরা বরিশাল ও গৌরনদীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি কলেজশিক্ষক মো. আলী শরীফ অভিযোগ করে বলেন, তিনি কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে সকাল সাড়ে সাতটায় গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে গেলে গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল শরীফের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়েরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই এবং হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুব বলেন, হামলার সঙ্গে যুবলীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত না। এরপরও খোঁজ নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. মনির হোসেন বলেন, ‘সকাল আটটার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়েরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী আমার কাসেমাবাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে বাগানে গেলে সন্ত্রাসীরা ধাওয়া দিয়ে তাঁকে পেটায় এবং কুপিয়ে জখম করে।’ মনিরের স্ত্রী পাপিয়া আক্তার বলেন, ‘স্বামীকে বাঁচাতে অনেক অনুনয়-বিনয় করি কিন্তু হামলাকারীদের মন গলাতে পারিনি।’
গৌরনদী পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মো. বাচ্চু সিকদার বলেন, সকাল সোয়া নয়টার দিকে মোটরসাইকেল মহড়া নিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁকে খুঁজে না পেয়ে গালিগালাজ করে চলে যায়।
সরিকল ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে বরিশালে যাওয়ার পথে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড পৌঁছালে ২০-৩০ জন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী রড, লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে।’ পৌর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, মামলার হাজিরা দিতে বরিশালে যাওয়ার পথে সকালে টরকী বাসস্ট্যান্ডে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রায় ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালায়।
এ ছাড়া গতকাল রোববার রাতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রোকনুজ্জামান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আবুল হোসেন ও পৌর যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁদের মধ্যে আবুল হোসেনকে বরিশালের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতায় আসার পর গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর করে বাড়িছাড়া করছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্যায় ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।