চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে ইসমাইলের পাশে মা দিলোয়ারা বেগম। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তোলা
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে ইসমাইলের পাশে মা দিলোয়ারা বেগম। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তোলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো কাতরাচ্ছেন আহতরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যায় ছেলে মো. ইসমাইল (১৭) ঘুমাচ্ছে। পাশে বসে আছেন উদ্বিগ্ন মা দিলোয়ারা বেগম। ৪ আগস্ট নগরের জুবিলি রোডে ইসমাইল গুলিবিদ্ধ হয়। ছেলেকে দেখার জন্য ছটফট করতে থাকা এই নারী শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার বাড়ি থেকে শহরে আসতে সক্ষম হন। ছেলে কেমন আছে—জানতে চাইতেই পাশে বসা মা দিলোয়ারা বেগমের চোখ দিয়ে টপটপ পানি ঝরতে থাকে।

স্বামীহারা এই নারী বলেন, ‘আমার জায়গাজমি কিছু নেই। দুইটা ছেলেই আমার সম্পদ। ইসমাইল ছোট। এখন তার এ অবস্থা। কী হবে জানি না। লোহাগাড়া থেকে আসার জন্য কেবল ছটফট করেছি এত দিন। এবার ছেলেকে একটু দেখতে পারলাম।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংগঠিত সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় ইসমাইল। ইসমাইলের মতো এ আন্দোলনে আহত ৪০ জন এখনো চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ গুলিবিদ্ধ। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন চারজন। ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৪ জন।

দিলোয়ারার মতো গুলিবিদ্ধ সন্তানের পাশে বসে ছিলেন মোহসিনা বেগম। তাঁর ছেলে মোমিনুল ইসলাম (১৪)। ৫ আগস্ট মনসুরাবাদ এলাকায় দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। সরকার পতনের পর চারদিকে ভাঙচুর ও থানা আক্রমণ শুরু হয়। রাস্তায় থাকায় তখন মোমিনুলও গুলিবিদ্ধ হয়। মা মোহসিনা বলেন, ছেলেটি লোকজনকে বাঁচাতে গিয়েছিল। তখন গুলি লাগে। এর পর থেকে এ হাসপাতালে রয়েছে।

তাঁদের বাসা ঈদগাঁ এলাকায়। তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মোমিনুল সবার ছোট। এখন তাকে নিয়ে চিন্তিত মা। মোমিনুল বলে, তার বাঁ পা বেশি ব্যথা করে। চিকিৎসকেরা আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে বলে জানান।

হাটহাজারী কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী রহমত উল্লাহ নিউমার্কেটের একটি দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করেন। ৪ আগস্ট নিউমার্কেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে তিনিও আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় গোলাগুলি শুরু হলে তাঁর বুকে গুলি লাগে। রহমতের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। থাকেন হাটহাজারীতে। রোববার থেকে হাসপাতালে রয়েছেন। এখনো গুলি বের করা যায়নি। পাশে বসে আছেন তাঁর স্বজনেরা।

রহমত বলেন, ‘নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন লোকজন আন্দোলনে সেদিন অংশ নেন। একপর্যায়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন গুলি শুরু করে। তখন আমার বুকে গুলি লাগে।’

মো. সেলিমের (৪৫) গুলি লাগে পিঠে। তিনি সরকার পতনের পর বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বহদ্দারহাটে সিটি মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি, থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

মো. সুলতানও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন রোববার। তিনিও নিউমার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে আরও সময় লাগবে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

শুধু চট্টগ্রাম নয়, ফেনী থেকেও আহত হয়ে অনেকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবসার হোসেনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী এলাকায়। রোববার ফেনী ট্রাঙ্ক রোডে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। আবসার বিএনপির রাজনীতি করেন। এ কারণে আন্দোলনে অংশ নেন বলে জানান।

আবসার বলেন, ফেনী ট্রাঙ্ক রোডে সেদিন আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ গুলি চালায়। তখন বুকে গুলি লাগে। এখনো গুলি বের করা হয়নি। অপারেশন পরে করবেন বলে চিকিৎসকেরা জানান।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, এখন ৪০ জনের মতো চিকিৎসাধীন। অনেকে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। এর মধ্যে চারজন এখনো আইসিইউতে রয়েছেন।