কুষ্টিয়ায় ২৬ দিনে ২৩ মামলায় আসামি বিএনপির ১৭২২ জন, গ্রেপ্তার ১৩৩

বিএনপি
বিএনপি

একসময়ে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়ায় কোনোভাবেই সক্রিয় হতে পারছেন না দলটির নেতা-কর্মীরা। একের পর এক মামলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। এ কারণে কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনোভাবেই মাঠে নামতে পারছেন না বলে দাবি বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের।

জেলার ৭টি থানায় শেষ ২৬ দিনে নাশকতার অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৭২২ জনকে। এই সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩৩ জন। জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতা-কর্মীরা বর্তমানে কারাবন্দী। তবে পুলিশের দাবি, কোনো বিএনপি নেতা-কর্মীকে আটক করা হচ্ছে না। যাঁরা নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের পর ২৯ অক্টোবর কুষ্টিয়া মডেল থানায় নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। এর পর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ দিনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে ২৩টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার সব মামলার বাদী পুলিশ। জেলায় সবচেয়ে বেশি ১১টি মামলা হয়েছে কুষ্টিয়া মডেল থানায়। এরপরই রয়েছে কুমারখালী ও মিরপুর থানায় তিনটি করে এবং দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানায় দুটি করে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও খোকসা থানায় আরও একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি বিএনপির ৫৩২ নেতা-কর্মী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ১ হাজার ১৯০।

হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতা ও জানমালের ক্ষতিসাধন যাঁরা করছেন, শুধু তাঁদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড ও মিডিয়া), কুষ্টিয়া

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ দিনে ২৩ মামলার ৫৩২ জন আসামির মধ্যে ১৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবচেয়ে বেশি মামলায় আসামি হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন। এরপরই রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক  মোজাক্কির রহমান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম-উল হাসান। তাঁরা সবাই এখন আত্মগোপনে।

আত্মগোপনে থাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম-উল হাসান বলেন, একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। নেতা-কর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এভাবে বানোয়াট মামলা ও গ্রেপ্তার করে চলমান এক দফার আন্দোলন কখনোই দমন করা যাবে না।

গত ২৬ দিনে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। অফিস সহকারী ইসলাম প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুই দফায় কার্যালয়ের তালা খোলেন। কয়েক ঘণ্টা থাকার পর চলে যান।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, যুববিষয়ক সম্পাদক মেজবাহুর রহমান, ভেড়ামার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম রেজা, দৌলতপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক বেনজির আহমেদ, খোকসা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম, শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহানুর রহমান, সদস্যসচিব ইমতিয়াজ দিবস, শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, আমলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাজু, জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জামির হোসেন, সদস্য হৃদয় হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রথম সারির অধিকাংশ নেতা-কর্মী কারাগারে।

গত ২৬ দিনে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। অফিস সহকারী ইসলাম প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুই দফায় কার্যালয়ের তালা খোলেন। কয়েক ঘণ্টা থাকার পর চলে যান। এই সময়ে সেখানে কেউ যান না। তবে এই কয়েক দিনে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ পাহারা দেখা যায়নি।

জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হরতাল–অবরোধে ছোট মিছিল হলেও পুলিশ নাশকতার মামলা দিচ্ছে। পরে ছবি ফুটেজ দেখে দেখে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ধরে আনে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বকুল আলী প্রথম আলো বলেন, বিনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতা ও জানমালের ক্ষতিসাধন যাঁরা করছেন, শুধু তাঁদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সেখানে কে কোন দল করে, তা দেখা হচ্ছে না। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপির অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।