বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে। রাত নয়টার দিকে জারি করা হয়েছে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত। কক্সবাজারে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। মহাবিপৎসংকেত পেয়ে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে (ঘাটে) ফিরতে শুরু করেছে। ট্রলার মালিক সমিতির দাবি, আজ শনিবার সকালের মধ্যে ৪ হাজার ৩০০টি ট্রলার ঘাটে পৌঁছেছে। আরও চার শতাধিক ট্রলার উপকূলের কাছাকাছি আছে। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে সব ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে পারবে।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার কক্সবাজার শহর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার আছে ৫ হাজার ১১৩টি। এসব ট্রলারে ১ লাখের বেশি জেলে–শ্রমিক থাকলেও তার মধ্যে মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৬৪।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ শুরু হওয়ার পর থেকে জেলেদের সতর্ক করে বিভিন্ন উপকূলে প্রচারণা শুরু করে মৎস্য বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের বাঁকখালী নদীতে ফিরতে শুরু করে। কিছু ট্রলার গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলের কাছাকাছি দূরত্বে এসে মাছ ধরতে থাকে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারির পর দেড় হাজারের মতো ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। গতকাল রাতে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারির পর আরও হাজারখানেক ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। সব মিলিয়ে গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ট্রলার ঘাটে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট কয়েক শ ট্রলার আজ দুপুরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসার কথা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, মাছ ধরার ট্রলারগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫৮১ টিতে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জিএসএম ডিভাইস লাগানো আছে। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পড়ামাত্র মৎস্য বিভাগের জয়েন্ট মনিটরিং সেল (চট্টগ্রাম ও ঢাকা) থেকে ট্রলারগুলোয় বার্তা পাঠানো হয়। বার্তা পেয়ে ট্রলারগুলো গভীর সাগর থেকে উপকূলের দিকে ছুটে আসে। ওই পদ্ধতির মাধ্যমে ট্রলারের ভেতরে থাকা লোকজনের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ রাখা যায়।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারির আগেই শহরের বাঁকখালী নদীসহ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার ঘাটে ফিরে এসেছে চার হাজারের বেশি ট্রলার। বাকিগুলো চলে আসবে।
এফবি কামরুল ট্রলারের জেলে শাহাবউদ্দিন (৪৫) বলেন, কাল রোববার দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার কথা। এরপর কিছুদিন সাগর উত্তাল থাকবে। ২০ মে থেকে শুরু হচ্ছে সাগরের মাছ ধরার ওপর সরকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে জেলেদের প্রায় ৭০ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সুযোগে শত শত জেলে ঘাটে ট্রলার রেখে বাড়িতে যাচ্ছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের তিন শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ ও টেকনাফ পৌরসভার খায়ূকখালী খালে আশ্রয় নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেন্ট মার্টিনের কোথাও ট্রলার রাখা যায় না। কারণ, দ্বীপের চারদিকে ছড়িয়ে আছে পাথরখণ্ড। উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলার পাথরখণ্ডে উঠে গেলে তলা ফুটো হয়ে সাগরে ডুবে যায়। বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ায় আজ সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ আছে।