দেশে নতুন করে নিবন্ধন পেতে যাওয়া দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে নরসিংদী জেলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) নামমাত্র কার্যক্রম থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) কোনো অস্তিত্ব নেই। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রবিউল আলম নিশ্চিত করেছেন, রায়পুরা ও বেলাব ছাড়া আর কোনো উপজেলায় বিএসপির রাজনৈতিক দলটির কার্যক্রম নেই।
বিএসপির নেতা–কর্মীরা বলছেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারীর পীর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ বিএসপির প্রধান। এক বছর ধরে তাঁর মুরিদেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নরসিংদীতে এখন পর্যন্ত রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় দলটির কার্যালয় রয়েছে এবং কমিটি হয়েছে। অন্য উপজেলাগুলোতেও কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ও কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রায়পুরার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের রাধাগঞ্জ বাজারের উত্তরপাড়া এলাকায় বিএসপির কার্যালয় অবস্থিত। এক বছর আগে এলাকায় রাজনৈতিক দলটির কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আঙুর মিয়া। আবুল কালাম আজাদ একজন আইনজীবী ও মো. আঙুর মিয়া পেশায় পল্লিচিকিৎসক।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাধাগঞ্জ বাজার থেকে রিকশায় ১০ মিনিটের পথ বিএসপির কার্যালয়। এর কাছাকাছি গিয়েও স্থানীয় লোকজনের কাছে দলটির কার্যালয় কোথায় জানতে চাইলে কেউ বলতে পারছিলেন না। সাইনবোর্ড দেখে কার্যালয়টিতে প্রবেশ করে নেতা–কর্মীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া অর্ধশতাধিক শিশুদের পড়াতে দেখা গেছে চারজন নারী শিক্ষককে।
ওই শিক্ষকেরা বলেন, এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার নাম মনমেলা। এখানে এলাকার শিশুদের স্কুল শেষে বিনা বেতনে পড়ানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি যে পরিবারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিএসপির সভাপতিও ওই পরিবারেরই সদস্য।
মুঠোফোনে সাধারণ সম্পাদক মো. আঙুর মিয়া বলেন, কমিটির ২৭ সদস্যই মাইজভান্ডারী পীরের মুরিদ। তাঁরা আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এলেও সরাসরি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, কোনো দলের কমিটিতেও ছিলেন না। গত বছর কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকেই তাঁরা নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের নামাবাজার এলাকায় কাঁচাকলা বাজারে একটি টিনের ঘরে বিএসপির কার্যালয়। তিন বছর ধরে পীরের মুরিদদের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হলেও রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছর। ২৭ সদস্যের উপজেলা কমিটি রয়েছে তাঁদেরও। ওই কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ। জসিম উদ্দিন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসএবিএল) স্থানীয় এজেন্ট ও মো. মোশাররফ একজন পল্লিচিকিৎসক।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, একটি টিনের ঘরে একত্র করা আছে কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার। ঘরের দুই প্রান্তে ঝোলানো আছে দুটি ব্যানার। কার্যালয়ের সামনে পড়ে আছে কিছু ইট–বালু। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই ইট-বালুর মালিক মো. সামি এগিয়ে এসে নিজেকে বিএসপির সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দেন। মূলত ইট-বালুর বিক্রির দোকানটিই বিএসপির কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। সামির ভাষ্য, এলাকায় পীরের অন্তত দুই হাজার মুরিদ আছেন। তাঁরা এ দলের সদস্য।
মুঠোফোনে সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ বলেন, এক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে নানা কর্মসূচি করেছেন তাঁরা। কমিটির কোনো সদস্যই অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। মাইজভান্ডারী পীরের মুরিদ হিসেবে তাঁর নির্দেশেই এ দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। নতুন করে নিবন্ধন পেতে যাওয়ায় তাঁরা আনন্দিত।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, জেলার রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় বিএসপি কার্যালয় ও কমিটি রয়েছে। তাঁরা সরেজমিনে তাঁদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দেন। এর ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন থেকে পর্যবেক্ষক দল তদন্ত করতে এসেও ওই কার্যালয় দুটির অস্তিত্ব পেয়েছেন। তবে বিএনএমের কোনো কার্যক্রম নরসিংদী জেলার কোথাও নেই।