মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে রোমান ব্যাপারীকে (৩২) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে নিহত রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।
নিহত রোমান ব্যাপারী সদর উপজেলার ভদ্রখোলা এলাকার আমর ব্যাপারীর ছেলে এবং তিনি পেশায় পিকআপ ভ্যানচালক ছিলেন।
মামলায় মাদারীপুর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নোবেল ব্যাপারীকে প্রধান করে ১৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। জেলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তিনজনের মধ্যে এটিই প্রথম মামলা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মামলায় রাস্তি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মো. বেল্লাল মোল্লাকেও আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা ছাত্রলীগ নেতা নোবেল ব্যাপারী ও বেল্লালের অনুসারী। নোবেল ও বেল্লাল দুজনই মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের পক্ষে রাজনীতি করেন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মস্তফাপুর গোলচত্বর থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। খাগদী বাসস্ট্যান্ডের দিকে এলে আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলিও ছোড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন রোমান ব্যাপারী (৩২) ও তাওহীদ (২০)। দুজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চরমুগরিয়া আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার আন্দোলনে প্রথম মারা যায় দীপ্ত দে নামের এক কলেজছাত্র। দীপ্ত ও তাওহীদের পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না করলেও রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার বাদী কাজল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই সেদিন মিছিলে গেছিল। বিনা কারণে একদল সন্ত্রাসী তাকে গুলিতে হত্যা করে। আমরা এত দিন অপেক্ষায় ছিলাম, দেখি কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে কি না। কেউ এগিয়ে আসে নাই। তাই মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত রোমানের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।