ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানো, সংখ্যালঘু সদস্যদের মারপিটের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের খলিলপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী শামীম হকের ৩০-৪০ জন কর্মী কেন্দ্রটি দখল করে নেন। এ সময় তাঁরা ওই কেন্দ্রের ছয়টি বুথের সব ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ভরতে থাকেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ।
ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইসমত আরা বলেন, প্রথমে নৌকার প্রার্থী শামীম হক এ কেন্দ্রে আসেন। কিছুক্ষণ থেকে তিনি চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই ৩০-৪০ জন নৌকার সমর্থক কেন্দ্রে ঢুকে সব বুথ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে দেন।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোলানাথ দে বলেন, জোর করে যে ভোটগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোর পেছনে পোলিং কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর ছিল না। সেগুলো বাছাই করে বাদ দিয়ে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের জেরা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এদিকে সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রণকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ঈগলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই ঘণ্টার জন্য ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশের রামখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে রামখণ্ডে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়নি।
পুলিশ জানায়, সকাল আটটায় রণকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার সমর্থকেরা জড়ো হয়ে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন। ওই সময় ঈগল সমর্থকেরা বাধা দিলে এ নিয়ে প্রথমে বচসা এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে নৌকার সমর্থক তপন কুমার গুহসহ দুই পক্ষের অন্তত তিনজন আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে যান। দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোট গ্রহণ পুনরায় শুরু হয় বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাফিস ইমতিয়াজ।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, ভোটকেন্দ্রে দুই পক্ষের সমর্থকদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সকাল ১০টার দিকে রণকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত মাঝিপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ওই পাড়ায় ঢুকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মারপিট করে আহত করে। এ সময় তারা রামদা দিয়ে টিনের বেড়া কোপায়। এ সময় মাঝিপাড়ার ১৫ জন আহত হন। মাঝিপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ওই সময় ভোটকেন্দ্রে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাঁদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঝিপাড়ার কয়েকজন নারী ও পুরুষ বলেন, তাঁরা ঈগলের সমর্থক। তাঁরা যাতে ভোট দিতে কেন্দ্রে না যান, এ জন্য তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ওই পল্লিতে কথা হয় পাশের ঘাটকুটা গ্রামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অত্যন্ত নিরীহ। কিন্তু ভোটের কারণে তাঁদের ওপর নির্যাতন নেমে আসছে।
সকাল আটটার দিকে অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চর মাধবদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্নিগ্ধ মণ্ডল (২৬) ও আপন মণ্ডল (২২) নামের ঈগলের দুই কর্মীকে মারধর করে তাঁদের কাছ থেকে থেকে ভোটার লিস্ট ও স্লিপ কেড়ে নেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী মাজেদুর রহমান। তবে মাজেদুর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় আমার বাড়ি। দুই বাচ্চা বলে তুই ক্যাডা। এ কথা শুনে আমি রেগে যাই। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। তবে আমি গায়ে হাত দিইনি।’
সাজেদা কবির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের ছাড়াই সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় তাঁর এজেন্টদের ঢোকাতে সক্ষম হন।