চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শীতে কাতর মানুষ। প্রতিকূলতার মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটছেন খেটে খাওয়া মানুষ। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের বোয়ালমারী এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শীতে কাতর মানুষ। প্রতিকূলতার মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটছেন খেটে খাওয়া মানুষ। আজ সকালে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের বোয়ালমারী এলাকায়

‘শীতির জ্বালায় এক্কেবারে মইরে গ্যালাম, রাতি ঘুমাইতে পারিনে’

চুয়াডাঙ্গায় চলতি শীত মৌসুমে তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে জেলায় তাপমাত্রা কমেছে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ।

গতকাল বুধবার একই সময়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, নিকট অতীতে এক দিনের ব্যবধানে এত তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। পশ্চিমে ঝড় সরে যাওয়ার কারণে আজ থেকে তাপমাত্রা নামার পূর্বাভাস ছিল। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে যাওয়াসহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর ১৪ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা আবারও বৃদ্ধি পাবে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নিচের তাপমাত্রাকে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সে হিসাবে আজ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে গত ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর একটানা তিন দিন জেলার ওপর দিয়ে প্রথম দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর ৯ দশমিক ৮; ১৪ ডিসেম্বর ৮ দশমিক ৭ ও ১৫ ডিসেম্বর ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৮ এবং আজ ৯ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকায় শীতজনিত রোগবালাই বেড়েই চলেছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভিড় লেগেই আছে। সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, বর্তমানে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বেশি চিকিৎসা নিতে আসছে।

গত ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর একটানা তিন দিন জেলার ওপর দিয়ে প্রথম দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় ২ জানুয়ারি ৯ দশমিক ৮ এবং আজ ৯ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারপাড়ার মৃত শুকুর আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭৫) আজ সকালে বাড়ির সামনে পাতলা, পুরোনো ও ছেঁড়া চাদর গায়ে বসে ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনাবারের চাইতি এবেড্ডা শীত বেশি। পাতলা খ্যাতায় একদম ওম হয় না। শীতির জ্বালায় এক্কেবারে মইরে গ্যালাম। রাতি ঘুমাইতে পারিনে। শীত লাগলি এইকেনে এট্টু বসি রোদ তাপাইনোর জন্নি। আইজ সকাল থেকেই রোদ য্যানো মেগের সাতে পলাপলি (লুকোচুরি) খ্যালচে। জানে শান্তি পাচ্চিনে।’

এদিকে শীতের কারণে চরম সংকটে পড়েছে কৃষিশ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও মাঠে মাঠে কৃষিশ্রমিকদের কর্ম ব্যস্ততা দেখা গেছে। সকালে সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের শৈলগাড়ি গ্রামের মাঠে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। সেখানে কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ দিচ্ছিলেন খেজুরতলা গ্রামের কৃষক মিনার উদ্দিন (৫০)। ঘনকুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে সকাল ছয়টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। মিনাজ বলেন, ‘ভাই, গরিপির শীতই কী, আর গরমই কী? প্যাটে খিদে থাকলি ঘরে বসে থাকা যায় না। তাই পরভাতে (প্রভাতে) বাড়িত্তি বেইর হইছি। ফিত্তি ফিত্তি সন্দে হয়ে যাবে।’