হাওরপারের শিশুদের পাশে মোজাহিদুল

বেদে সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াচ্ছেন মোজাহিদ। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ শহরতলির নতুন জেলখানা মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলগুলো বছরে পাঁচ থেকে ছয় মাস পানিবন্দী থাকে। এ সময় দরিদ্র অনেক পরিবার তাঁদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারে না। এমন শিশুদের পাশে দাঁড়ান মোজাহিদুল ইসলাম (২১)। শিশুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের খাতা, কলম, স্কুলব্যাগ উপহার দেন। নতুন ইউনিফর্ম কিনে দেন নিজের টিফিন ও টিউশনের টাকা থেকে।

কিশোরগঞ্জের হাওর–অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার মোজাহিদুল ইসলাম (২১) নিজে পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন কিশোরগঞ্জ ভলান্টিয়ার্স নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শিশু অধিকার ও শিশুদের উন্নয়নে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন তাঁকে ‘চেঞ্জমেকার’ হিসেবে উল্লেখ করে এবং বাংলাদেশ থেকে মোজাহিদকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ২০২২–এর জন্য মনোনীত করা হয়। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে পড়ছেন।

মোজাহিদুল বলেন, শিশুরা হলো সুন্দরের প্রতীক। ভালোবাসার প্রতীক। তবে সুবিধাবঞ্চিত অনেক শিশু এসব থেকে বঞ্চিত। তিনি তাঁর হাওর অঞ্চলের শিশুদের ভালোবেসে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও আরও বড় পরিসরে করতে চান। এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তাঁর চাওয়া, সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা যেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ান।

কীভাবে এ কাজে যুক্ত হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁর বাবা অধ্যক্ষ এ কে এম গিয়াস উদ্দীন ২০১৮ সালে মারা যান। তিনি মিঠামইন সদরের মহিষারকান্দি আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর বাবা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। বাবার সম্মানে তিনি এ কাজ শুরু করেন।

মোজাহিদুল বলেন, যাযাবর জীবনযাপন করায় বেদেপল্লির ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বেদে শিশুদের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দুই বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি। শহরতলির খিলপাড়া এলাকায় বেদেপল্লিতে একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠশালা চালু করেন। যেখানে অর্ধশত বেদে শিশুকে তিনি পড়াচ্ছেন।

সম্প্রতি বেদেপল্লির শিশুদের নিয়ে তিনি শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন। ফলের মৌসুমে শিশুদের নিয়ে ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বিনা পয়সার শীতবস্ত্র মেলার আয়োজন করেন। এই মেলা থেকে শীতার্ত শিশুরা নিজেদের পছন্দমতো সোয়েটার, গেঞ্জি ও কম্বল কিনতে পারে কোনো টাকা ছাড়াই।

হাওরাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে। নতুন প্রজন্মের শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন মোজাহিদুল ও তাঁর বন্ধুরা। খুদে শিশুদের গল্পের মাধ্যমে তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা বিষয় বোঝান। এ ছাড়া চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা করা হয়। নানা প্রজাতির গাছও উপহার দেন তিনি শিশুদের।

মোজাহিদুল বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভালোবেসে তাদের মুখে তিনি হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন। কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করতে তাঁর বন্ধুরা সব সময় তাঁকে সহযোগিতা করে থাকেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মিঠামইন উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, মোজাহিদের মতো এভাবে সবাই যদি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতেন, তাহলে কেউ অবহেলিত থাকত না।