পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। আজ শনিবার সকাল থেকেই টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৮০টি লঞ্চ ঢাকা নদীবন্দর ছেড়ে যায়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুট থেকে সদরঘাট টার্মিনালে এসেছে ৯৫টি লঞ্চ।
আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের আমতলী, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভান্ডারিয়া, ভোলা, ভাষানচর, মনপুরা ও হুলারহাটগামী লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। শত শত যাত্রী তাঁদের পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে লঞ্চের ডেকে পাটি ও চাদর বিছিয়ে বসে আছেন। লঞ্চের ডেকের কোথাও ফাঁকা জায়গা ছিল না। এসব রুটের বেশির ভাগ লঞ্চ যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগে বন্দর ছেড়ে চলে যায়।
বিকেলে চরফ্যাশনগামী এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের কর্মচারী কাদের হোসেন বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ছাড়ার সময় ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। বিকেল ৩টার মধ্যে লঞ্চ যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সেজন্য নির্ধারিত সময়ের আগে বিকেল ৫টার দিকে লঞ্চ গন্তেব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।’
লঞ্চে যাত্রী বোঝাইয়ের জন্য জোরে জোরে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন মনপুরাগামী এমভি টিপু লঞ্চের কর্মচারী ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন লঞ্চে সারা বছর যাত্রী কম থাকে, শুধু ঈদে যাত্রী বেশি হয়। এ সময় আমাদের বাড়তি কিছু আয় হয়। তাই হাঁকডাক দিয়ে লঞ্চে যাত্রী তুলছি।’
রাজধানীর উত্তরা হাউসবিল্ডিং থেকে আসা ভাষানচরগামী এমভি রাজহংস-৮ লঞ্চের যাত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। লঞ্চের ডেকের ভালো জায়গায় বসার জন্য স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বেলা একটার দিকে লঞ্চে এসেছি। এরপরও সুবিধামতো জায়গা পাইনি। পরে ডেকের এক কোনায় পাটি বিছিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসেছি।’
রাঙ্গাবালীগামী এমভি বালিয়া লঞ্চের যাত্রী আঁখি বেগম বলেন, ‘লঞ্চের ডেকে বসে অল্প ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া একটানা বসে থাকার পর হাঁটাচলাও করা যায়। তাই প্রতিবার ঈদ মৌসুমে আমরা লঞ্চে যাতায়াত করে থাকি।’
পটুয়াখালীগামী এমভি সুন্দরবন-১২ লঞ্চের যাত্রী ফখরুল হোসেন বলেন, ‘ঢাকা শহরে তীব্র যানজটের কারণে ঈদে প্রতিবার সদরঘাটে আসতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবারও গুলিস্তান থেকে সদরঘাটে আসতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। সঙ্গে স্ত্রী, সন্তান ও মালামাল থাকায় বাস থেকে নেমে হেঁটে আসার সুযোগ থাকে না। নদীপথের যাত্রীদের কথা চিন্তা করে অন্তত ঈদ মৌসুমে সড়কে যানজট নিরসনে প্রশাসনের কঠোর হওয়া উচিত।’
লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক ও এমভি ইয়াদ লঞ্চের মালিক মামুন অর রশিদ বলেন, পোশাক কারখানা ছুটি হলে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। যাত্রী বহনের জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে।
নৌ পুলিশ সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, নদীপথের যাত্রীদের হয়রানি রোধ ও তাঁদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নৌ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। লঞ্চে চাদর পার্টি, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে পুলিশ নজরদারি করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। কোনো লঞ্চ নির্দেশনা অমান্য করলে ওই লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে নোঙর করা লঞ্চের সিঁড়ি দুর্বল ও সিঁড়িতে রেলিং না থাকায় তিনটি লঞ্চকে জরিমানা করেছেন বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিকেলে সদরঘাট টার্মিনালে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক। তিনি বলেন, লঞ্চে ওঠার সিঁড়ি দুর্বল ও সিঁড়িতে রেলিং না দেওয়ায় এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চকে ৩ হাজার টাকা, এমভি আল সাফিন সাত্তার খান লঞ্চকে ৫ হাজার টাকা ও এমভি বালিয়া লঞ্চকে ৫ হাজার টাকাসহ মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।