বগুড়া অঞ্চলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে উৎপাদন মৌসুমে চাষিদের কাছ থেকে গড়ে ২০-২২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন মজুতদারেরা। এরপর হিমাগারভাড়া, চটের বস্তা ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে এখন এক কেজি আলু সংরক্ষণে খরচ যোগ হয়েছে গড়ে ৮ টাকা। হিমাগার থেকে বের করা ওই সময়ের প্রতি কেজি আলুর খরচ পড়ে ২৮-৩০ টাকা। তবে সেই আলু পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর এক হাত বদলের পর খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম উঠেছে ৭০ টাকায়।
অর্থাৎ হিমাগার পর্যায়েই আলুর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া অঞ্চল (বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা) দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের হিমাগার পর্যায়েই সব ধরনের আলুর দাম এক মাসের ব্যবধানে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ টাকা বেড়েছে। আর প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) বেড়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
এ অবস্থার কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও ক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ শুরুর আগে প্রতিবছরই হিমাগার ফটকে আলুর দাম বাড়ানোর সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন প্রতিবারই তৎপর থাকত। তবে এবার হিমাগার পর্যায়ে অভিযান চালানো হয়নি বললেই চলে। তদারকি সংস্থার নজরদারির অভাবে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো আলুর দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
কৃষক, ব্যবসায়ী, হিমাগারমালিক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন হিমাগার পর্যায়ে ৪০ টাকা দরে আলু বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজি আলুতে গড়ে ১০ টাকা লাভ পাওয়ার কথা। গত মধ্য অক্টোবর মাসেও বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় হিমাগার পর্যায়ে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু গড়ে ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বিলম্বিত হওয়ায় এক মাসের ব্যবধানে বর্তমানে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬০-৬৫ টাকায়। এক হাত বদলে খুচরা পর্যায়ে এ আলু ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি বস্তা আলুর দাম গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় গত উৎপাদন মৌসুমে প্রায় ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে ২০ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দুই জেলার ৬১টি হিমাগারে ব্যবসায়ী ও মজুতদারেরা ৫ লাখ ২০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেন।
বগুড়ার বিসিএল কোল্ড ষ্টোরেজ এর ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হিমাগারে সংরক্ষিত প্রতি বস্তা সাদা জাতের আলু গত মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। এক মাস আগেও এক বস্তা আলুর দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। গত রোববার দেশি আলু বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। এক মাস আগে এ আলুর দাম ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা। বগুড়ার অন্তত ১২টি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
ফতেহ আলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি সাদা আলু ৬৫ টাকা এবং এক কেজি দেশি লাল দেশি আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একই দিন সকালে বগুড়ার খুচরা বাজারে আলু কিনতে আসেন সুত্রাপুরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন। তাঁর ভাষ্যমতে, আলুর দাম খেয়ালখুশিমতো বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের বাজার তদারকি না থাকায় আলুর দাম এভাবে বেড়েছে।
তদারকির বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বগুড়ার সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কমিটি ও টাস্কফোর্সের সভা হয়েছে। সেখানে আলুর যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে হিমাগারমালিকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দরে ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আলুর মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিম।