পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্য লিপিবদ্ধ হওয়ায় বয়স নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এবার এইচএসসি পাস করা আবদুস সাত্তার। এসএসসির সনদে তাঁর বয়স ১৮ হলেও জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী বয়স দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১ বছর। জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্যের কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন না আবদুস সাত্তার।
আবদুস সাত্তার উপজেলার করমজা ইউনিয়নের পুণ্ডুরিয়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জন্মনিবন্ধনে জন্মতারিখ রয়েছে ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর। অথচ জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির সনদ অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০০৪ সাল। এটাই তাঁর প্রকৃত জন্মতারিখ বলে জানান সাত্তার। অথচ জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী বয়স হয় প্রায় ৭১ বছর। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর বাবা আজমত আলীর জন্মতারিখ ১৯৫৭ সালের ৮ জানুয়ারি ও মায়ের জন্মতারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭।
যাঁরা জন্মনিবন্ধনের তথ্য লিপিবব্ধ করেছিলেন, তাঁদের ভুলে এ ধরনের অল্প কিছু সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছেন করমজা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব আবদুল মতিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বয়স সংশোধনের বিষয়টি এখন আর আমাদের পরিষদের হাতে নেই। সার্ভার থেকে এ অপশন তুলে দেওয়ায় এগুলো আপাতত সংশোধন করা যাচ্ছে না। তবে ওই ব্যক্তি (আবদুস সাত্তার) আমার কাছে এলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’
আবদুস সাত্তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করলে সমাধানে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেনও।
সংসারে অভাব থাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করেন আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধনের তথ্য লিপিবদ্ধকারীর কারণে এ ভুল হয়েছে। এ কারণে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছেন তিনি।
পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে আবদুস সাত্তার বলেন, পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় পড়ালেখার খরচ জোগাতে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ও জন্মনিবন্ধনে বয়সের এমন ভুল থাকায় চাকরির জন্য কোথাও আবেদন করতে পারছেন না। গত বছর জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। এতে তাঁকেসহ অন্যদের ছবি তোলার জন্য ডাকা হয়। পরে সেখানে গেলে তাঁর ছবি তোলা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বয়স সংশোধন করে আবার আবেদন করতে বলেন। এর পর থেকে তিনি নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও বয়স সংশোধন করতে পারছেন না।
আবদুস সাত্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘বন্ধুরা ঠাট্টা করে আমাকে দাদু ডেকে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে বলে। সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চরম চিন্তায় আছি।’
আবদুস সাত্তারের বাবা আজমত আলী একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। প্রায় ২৫ আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি।
আজমত আলী বলেন, ‘আমার চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাত্তার সবার ছোট। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করে বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি ও চাকরির আবেদন করতে গিয়ে বয়স নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে ছেলেটা। আমি দুর্ঘটনায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পর থেকে সাত্তার পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করছে।’