আরশের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পিয়াইন নদের পানিতে ডুবে শেষ

আল ওয়াজ আরশ
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. আল ওয়াজ আরশ। স্বপ্ন ছিল পাইলট হবে। ডানা মেলে উড়ে বেড়াবে আকাশে। মেঘ দেখবে খুব কাছ থেকে। দুঃস্বপ্নের মতো এক ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে সেই স্বপ্ন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ের পিয়াইন নদে নেমে স্রোতের টানে হারিয়ে যায় আরশ। দুই দিন পর আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রাণহীন অবস্থায়।

পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) বাবা মো. জাহিদুল হোসেন, স্কুলশিক্ষক মা সুরাইয়া আক্তার ও ছোট ভাই মো. আরীব উল পিয়াশের (১৩) সঙ্গে তিন দিনের জন্য সিলেটে বেড়াতে এসেছিল ১৫ বছরের আরশ। তাঁদের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই গ্রামে। মা–বাবার চাকরির সূত্রে বেড়ে উঠেছে গাজীপুরের টঙ্গীতে মামাবাড়িতে। পরে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল। জাহিদুল হোসেন বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত।

নিখোঁজের পর আরশকে উদ্ধারে পিয়াইন নদে অভিযান। আজ শনিবার সকালে

নিজে পুলিশ সদস্য হওয়ায় প্রায়ই এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন জাহিদুল হোসেন। কিন্তু নিজের সঙ্গেই কখনো এমন ঘটনা ঘটবে কল্পনাতেও আনেননি তিনি। আজ ছেলের প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কথা বলার সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল।

ছেলেকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপভরা কণ্ঠে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহিদুল হোসেন বলেন, ‘কী থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু “আব্বু...” বলে একটি চিৎকারের মতো কিছু একটা শুনেছি। এরপর ছেলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ছেলেকে স্রোতে তলিয়ে নিয়ে গেছে।’

জাহিদুল হোসেন বলেন, তিনি তখন পানিতে ছিলেন। আরশ পানিতে নেমে কাগজের কিছু একটা দিয়ে খেলছিল। সে সময় হঠাৎ এমন ঘটনা ঘটে গেছে। তিন দিনের জন্য সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন তাঁরা। ৫ জুলাই সিলেটে আসার পর ৭ জুলাই বিকেলে ট্রেনে ঢাকা ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু এক দিন বাড়তি সময় নিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।

ছেলে পানির স্রোতে নিখোঁজের পর মা সুরাইয়া আক্তার নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। পুলিশ সদস্য বাবা ঘটনার পর বুঝতে পেরেছিলেন ছেলেকে আর জীবিত উদ্ধার সম্ভব নয়। তবে স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন হয়তো ছেলেকে জীবিত পাওয়া যাবে। লাশ পাওয়ার পর স্ত্রীকে আর সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছেন না জাহিদুল। বন্ধুর মতো ভাইকে হারিয়ে চুপচাপ হয়ে গেছে আরীব উল পিয়াশও।

আরশ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে অনলাইনে কোরআন শিক্ষা শুরু করেছিলেন। জাহিদুল হোসেন বলেন, কোরআন শরিফের ১২ পারা শেষ করেছিল আরশ। বাকিগুলো আগামী রোজার মধ্যে শেষ করবে জানিয়েছিল। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, পিয়াইন নদ থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরে সেখানেই দাফন করার কথা রয়েছে।