গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে নেত্রকোনায় বাজারে সব ধরনের শাকসবজির দাম আরও বেড়ে গেছে। শুধু পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো শাকসবজি নেই বললেই চলে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, স্থানীয়ভাবে শাকসবজির উৎপাদন কম। এ ছাড়া বৃষ্টিতে খেতে শাকসবজি নষ্ট হওয়ায় সরবরাহ কম হচ্ছে। এতে দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে সরকার আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত নেত্রকোনার বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বিভিন্ন ধরনের মসলাসহ মাছ-মাংসের দামও বেশি। এ অবস্থায় বাজার করতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের লোকজনদের।
শহরের মোক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন ঘুষের বাজারে গত শুক্রবার সকালে বাজার করতে আসা নাগড়া এলাকার মনোরঞ্জন সরকার নামের একজন ক্রেতা একটি চালকুমড়া কিনে ব্যাগে ভরছিলেন। এ সময় এই প্রতিবেদক তাঁকে কম টাকায় চালকুমড়া কেনা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি হতাশার সঙ্গে বলেন, ‘দেখেন, ছোট্ট একটা কুমড়া, ৬০ টাকা দাম দিয়ে কিনেছি। এটা ভাবা যায়? আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কী খাবে? সব শাকসবজির দাম ক্রয় সীমানার বাইরে। আগে হল্যান্ডের আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দাম থাকত, এখন তা ৫০ টাকা কেজি।’
গত শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঘুষেরবাজার ছাড়াও মেছুয়াবাজার, আখড়াবাজার, রেলক্রসিং বাজার, নাগড়া আনন্দবাজারসহ বেশ কটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০, বেগুন ৬০ থেকে ৬৫, বরবটি ৬০ থেকে ৬৫, ঝিঙা ৬০ থেকে ৬৫, পটোল ৫০ থেকে ৫৫, করলা ৭৫ থেকে ৮০, পেঁপে ৪৫, শসা ৫০ থেকে ৬০, দেশি আলু ৬০, বড় আলু ৫০, কাঁকরোল ৭৫, মুলা ৬০, ধুন্দুল ৮০, কচুর মুখি ৬৫, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাউ ও চালকুমড়া আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও লাল ডিম প্রতি হালি ৫২ টাকা, হাঁসের ডিম ৬৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এখনো বাজারে আমদানি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও চওড়া। বাজারে কম দামের মাছ বলতে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে কিছুদিন আগেও পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া মাছ পছন্দের ছিল। কিন্তু এগুলো এখন প্রকারভেদে ২২০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মেছুয়াবাজারে মাছ কিনতে আসা মালনী এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরার মতো গরিব মানুষের অহন বাইচ্ছা থাহনই দায়। সারা দিন রিকশা চালাইয়া ৪০০ থাইক্কা ৫০০ টেহা পাই। এই টেহা দিয়া চাউল, তেল-মসলা কিনার পরে তরকারি ও মাছ কিনার টেহা থাহে না। অহন এক সপ্তাহেও পাঙাশ মাছ কিনতে কষ্ট হয়। একবার দাম বাড়লে আর কমে না। কমলেও দুই-চার টেহা কমে।’
নাগড়া আনন্দবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা শাকসবজির দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে যাচাই করছেন। সবজি কিনতে আসা ওই এলাকার স্কুলশিক্ষক আল মামুন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে শাকসবজির দাম আরও বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকা কেজি দরে বেগুন কিনেছিলাম। এখন ৬৫ টাকায় কিনেছি। সরকার ডিম, আলু পেঁয়াজসহ কিছু জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও নেত্রকোনায় কোনো প্রভাব পড়েনি। দেশি আলু কিনেছি ৬০ টাকা ও হল্যান্ড ৫০ টাকা কেজি দরে। দাম বেশি হওয়ায় সবকিছু অল্প অল্প করে কিনলাম।’
আনন্দবাজারের সবজি বিক্রেতা রমিজ মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরেই সব শাকসবজির দাম একটু বেশি।
মাছবাজার সুপারমার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, ‘নেত্রকোনায় প্রায় ৭০ ভাগ সবজি আসে বাইরের জেলা থেকে। বৃষ্টি কারণে সবজির উৎপাদন একটু মনে হয় কম। তাই আমাদের মোকামে সরবরাহ করা সবজির দাম কিছুটা বেশি।’
বাজার করতে আসা সংস্কৃতিকর্মী মো. আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান, তবে তা অন্যায়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’