কিশোরগঞ্জ সদরের ব্রাক্ষণকচুরী গ্রামে হিন্দু বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, র্যাব-২ আগারগাঁওয়ের সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষণকচুরী গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়ার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রয়াত জয়কৃষ্ণ বর্মণের স্ত্রী গীতা রানী বর্মণের (৬৫) বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় তাঁরা ঘরে থাকা আসবাবপত্র, টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান। প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ভুক্তভোগী গীতা রানী পরিবার। এখনো তাঁরা বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভয়ে বাড়িছাড়া।
এ ঘটনায় ইদ্রিস মিয়াসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে গত ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী গীতা রানী বর্মণ। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল তাঁর পরিবার।
গীতা রানী বর্মণের ভাই প্রদীপ বর্মণ মামলার ১ নম্বর আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি অনুভব করে বলেন, ঘটনার প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাঁরা এক ধরনের হতাশায় ছিলেন। আসামিরা ইদ্রিস মিয়ার নেতৃত্বে তাঁর বোনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ ২০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধনসহ ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১৫ লাখ টাকাও লুট করে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে আসামিরা তাঁদের মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। যে কারণে ভয়ে তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারছিলেন না। সে জন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। গত বুধবারও তাঁরা এসব কর্মসূচি পালনসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
বাদী গীতা রানী বর্মণ বলেন, ‘বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে পরে বসতবাড়ির ঘরের দরজা জানালা খুলে নিয়ে যায়। মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা মুঠোফোনেসহ আমাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। সেই সঙ্গে আসামিরা উল্টো বিদেশে থাকা আমার এক ছেলেকে আরেকটি মামলার আসামি করে। যে কারণে আমরা আমাদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও কালীপূজা কোনটিই উদ্যাপন করতে পারিনি। পলাতক অবস্থায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলাম আমরা।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘু পরিবারের সঙ্গে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য সদর মডেল থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।