গাজীপুরে প্রতিদিন হুটহাট বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই পরিস্থিতি সাভার ও ধামরাই এলাকায়ও।
লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যার কারণে পণ্য উৎপাদন খরচও বাড়ছে।
দিনে-রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
নবাগত জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের যোগদান উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলনকক্ষে সভা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে যায়। বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। গাজীপুরে প্রতিদিন এভাবে হুটহাট বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই পরিস্থিতি ঢাকার সাভার ও ধামরাই এলাকায়ও।
শুধু দিনে নয়, রাতেও লোডশেডিং হওয়ায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না মানুষ। দিনে-রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। কারখানার উৎপাদন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় চরম ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গাজীপুরে চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৪ দশমিক ১৩ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
গাজীপুরের খাইলকৈর এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর রাত ৯টায়, অনেক সময় ১০টার দিকে আসে। ঘণ্টাখানেক থাকার পর আবারও চলে যায়। লেখাপড়া করতেই পারছি না।’
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা জানান, অস্বাভাবিক গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিশেষ করে পানি শেষ হয়ে গেলেও মোটর চালু করা যাচ্ছে না। আশপাশের টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
গাজীপুর গরের মাদবপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হযরত আলী বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যার কারণে পণ্য উৎপাদন খরচও বাড়ছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও কারখানা চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।
গাজীপুর জেলার বড় একটি এলাকা গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর আওতাধীন। এই এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ছিল ৩৪৮ মেগাওয়াট। পাওয়া গেছে ২৬৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ২৪ দশমিক ১৩ ভাগ। বেলা একটার দিকে বিদ্যুতের চাহিদা হয় ৩৪৬ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে পাওয়া যায় ২৮৫ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৩ ভাগ এবং বিকেল চারটার দিকে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৮৫ মেগাওয়াট, পাওয়া গেছে ২৯৬ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১৪ দশমিক ২০ ভাগ। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১–এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আবুল বাশার আজাদ বলেন, আবহাওয়ার তাপমাত্রার ওপর বিদ্যুতের লোডশেডিংও অনেকটাই নির্ভরশীল।
ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়েও বেড়েছে লোডশেডিং। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই থেকে পাঁচবার লোডশেডিং করা হয়েছে। এ কারণে মানুষের ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদনব্যবস্থা সচল রাখতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।
আশুলিয়ার বিলটেস্ক নিটওয়্যার লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময়ে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে ৭৫ লিটার ডিজেল ব্যবহার করতে হয়েছে। এতে প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩–এর আওতায় সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাঁদের দু-তিনবার লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। প্রতিবারই ২০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এলাকাভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লোডশেডিং মোকাবিলা করেছেন তাঁরা।
সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় রাত সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুবার লোডশেডিং হয়। এর পর থেকে কিছুক্ষণ পরপরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে জানান তাঁরা। ধামরাইয়ের উত্তর পাঠানটোলা এলাকায় সোমবার রাত ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবারে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এভাবে চলতে থাকলে বাসা ছেড়ে ভার্সিটির হোস্টেলে ওঠা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।’
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩–এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) খাদেমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে তাঁদের লোডশেডিং ছিল না। তবে গতকাল সকালে ছিল। সকাল নয়টার দিকে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল। এ সময় ২৬৪ মেগাওয়াট প্রয়োজন ছিল, বিপরীতে পাওয়া গেছে ১৯৮ মেগাওয়াট।