হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ‘প্রতীকী অনশন’

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় ও আন্তর্জাতিক মানের উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘প্রতীকী অনশন’। রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় ও আন্তর্জাতিক মানের উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ‘প্রতীকী অনশন’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে একই স্থানে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে মানববন্ধন করেছিলেন।

আজ অনশন কর্মসূচিতে ভেটেরিনারি অনুষদের কাওসার আহমেদ, পরিসংখ্যান বিভাগের তোফাজ্জল হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সুজন ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কাওসার আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ছিল একটি শিক্ষাবান্ধব ও গবেষণা অনুকূল ক্যাম্পাস পাওয়া। কিন্তু বিগত দেড় মাসেও সেটি হয়ে ওঠেনি। এমনকি উপাচার্য পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন একজন উপাচার্য চাই, যিনি ক্যাম্পাসের রাস্তায় চার চাকার গাড়ি ছাড়াই মাঝেমধ্যে পায়ে হেঁটে ঘুরবেন। যিনি টিএসসিতে মাসে অন্তত এক দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক হোক কিংবা বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা হোক, আমরা কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের ‘পুতুল’কে উপাচার্য হিসেবে চাই না। স্বজনপ্রীতির ধারককে চাই না। আমরা চাই একজন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন যোগ্য শিক্ষাবিদ। স্বজনপ্রীতি, দলবাজি কিংবা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীকে ধারণ করা নয়, বরং একাডেমিক উন্নয়নই হবে তাঁর মূল লক্ষ্য।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী (এখানে সমন্বয়ক কমিটি নেই) শিক্ষার্থীদের অন্যতম সুজন ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ খুবই জরুরি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি কমানো, আবাসিক সুবিধা, পরিবহন সুবিধা বাড়ানোসহ ৯ দফা দাবি দিয়েছিলেন। উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় সেসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি আবাসিক হলগুলোতে যাঁদের প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ২৭টি প্রশাসনিক পদের বিপরীতে এক অনুষদ থেকেই ২৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেটি দৃশ্যমান বৈষম্য। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো প্রকার মতবিনিময় করার প্রয়োজন মনে করেনি বর্তমান প্রশাসন। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানের একজন উপাচার্য। শিক্ষা উপদেষ্টা পর্যালোচনা করে যদি সেই শিক্ষক আমাদের নিজ ক্যাম্পাসের হয়, আমাদের আপত্তি নেই।’

তবে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, বিগত ২ জন উপাচার্য ছিলেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ও পরিবেশ বুঝে উঠতেই তাঁদের পুরো সময় চলে যায়। তাঁরা নিজ স্বার্থে একটি বিশেষ মহলকে নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা করেন। ফলে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোনো জ্যেষ্ঠ শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার্থীদের চাহিদা সম্পর্কে অবগত থাকবেন। উপাচার্য হিসেবে যেকোনো সমস্যার দ্রুততম সমাধান করাও তাঁর পক্ষে সহজ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে পারবেন।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আজকের ‘প্রতীকী অনশন’ কর্মসূচি শেষ করা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, হল সুপারসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রায় সবাই পদত্যাগ করেন। ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর এ দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হাসান ফুয়াদ এলতাজ।