পরিবারের সদস্যদের চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহাসড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান আবদুস সত্তার মিয়া (৮০)। দুর্ঘটনা এড়াতে তখন সড়কের গাড়িগুলো থেমে যায়, লেগে যায় যানজট। অকারণেই মানুষকে বিরক্ত করেন, এমন অভিযোগ আসে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন অস্বাভাবিক অবস্থা সামাল দিতে দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছেন স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬০। বাধ্য হয়ে তাই স্বামীর পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে রেখেছেন তিনি।
বছর দুয়েক আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ আবদুস সাত্তার মিয়া। পায়ে শিকল পরানোর পর থেকে এখন তাঁর দিন কাটে ঘরের ছোট্ট জীর্ণ একটি কক্ষে। যেটুকু সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে সাত্তার মিয়াকে ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে অর্থের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিতে পারেননি তাঁরা।
আবদুস সাত্তার মিয়া ঝালকাঠি পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিফইতনগর এলাকার বাসিন্দা। চার মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি। এলাকায় ঘরামি (কাঠমিস্ত্রি) হিসেবে তিনি পরিচিত। কর্মজীবনে দুই শতাধিক টিনের ঘর তিনি বানিয়েছেন। তাঁর কারুকাজের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। যে মানুষটি এলাকার মানুষকে থাকার ঘর তৈরি করে দিতেন, তাঁকে এখন কাটাতে হচ্ছে শিকলবন্দী জীবন।
আবদুস সাত্তার মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী এলাকার কত মাইনষেরে সুন্দর সুন্দর ঘর বানাইয়া দিছে। অথচ শ্যাষ বয়সে তাঁকে শিকলবন্দী অবস্থায় ঘরে আটকাইয়া রাখতে অয়। এডা যে কত কষ্টের, হেয়া বুঝাইতে পারমু না।’ তিনি বলেন, দুই বছর আগে কাঠমিস্ত্রি সাত্তার মিয়া অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করেন। বাড়ির পাশের গাবখান সেতুর ওপর উঠে বা মহাসড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতেন। স্বামীকে সুস্থ করতে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু সুস্থ করে তুলতে পারেননি।
আবদুস সাত্তার-আলেয়া দম্পতির চার মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রহমান (৩৫) ইটের ভাটায় কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে তাঁদের ছয়জনের সংসার।
আলেয়া বেগম বলেন, কোনো সহায়সম্পত্তি নেই তাঁদের। তিন শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বসতঘরটিও জরাজীর্ণ। তাঁর স্বামী বয়স্ক ভাতা পান, তবে প্রতিবন্ধী ভাতা পান না। অভাবের সংসারে স্বামীর চিকিৎসা অনেক পরের বিষয়, ছয়জনের দুবেলা খাবার জোগাড়ই কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তা চেয়েছেন।
গত শুক্রবার সকালে আবদুস সাত্তার মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি কক্ষে বিছানায় থাকেন তিনি। অনেক রাত তাঁর নির্ঘুম কাটে। প্রাকৃতিক কাজকর্ম বিছানাতেই সারতে হয়। স্ত্রী আলেয়া বেগমই সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।
কিফইতনগর এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কাঠমিস্ত্রি সাত্তার মিয়া একসময় ভালো ঘর তৈরি করতেন। তবে এখন বেশ অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছেন। কারও আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।