সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার খুন, গুম, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এই ওসমান পরিবার মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, আশিক, চঞ্চল, ভুলু সাহা, মিঠুসহ অনেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার গত ১৫ বছরেও ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে একটি হত্যারও বিচার করেনি। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি, ওসমান পরিবারের বিচার করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৩৭ মাস উপলক্ষে আয়োজিত মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বক্তারা এই দাবি জানান। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিহত ত্বকী, আশিক, চঞ্চল, ভুলু সাহা ও মিঠুর ফেস্টুন রাখা হয়।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ঘাতক ওসমান পরিবারের বিচার চেয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করছে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা কমিটির সভাপতি জাহিদুল হক, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বাসদ জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলার সহসভাপতি রীনা আহমেদ, সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, নিহত সংস্কৃতিকর্মী চঞ্চলের বড় ভাই পমেল আহমেদ প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত আশিক হোসেনের বড় ভাই ফাহিম হোসেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ওসমান পরিবার ও সাঙ্গপাঙ্গরা প্রশাসন ও সরকারের আশীর্বাদপুষ্ঠ হয়ে পরিবহন, হাটঘাট, ঝুট সেক্টরসহ সবকিছু দখল করে চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছে। মাদকের ব্যবসা করেছে। ঘাতক আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেছেন পুলিশ সুপার। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’ একই সঙ্গে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার শুরু করার দাবি জানানো হয়।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি দেখেন, বিএনপির যাঁরা দখল করা শুরু করেছেন, তাঁদের থামান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি করার ঘটনায় শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, শাহ নিজামের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করুন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করুন।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই তাঁরা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।