নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়নের একটি দুর্গম চরে মা ও মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন মো. হারুন ও মো. হাসান। আসামিরা স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে নির্যাতনের শিকার নারী ও তাঁর মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য আজ রোববার দুপুরে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য তাঁদের নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে চর এলাহি বিএনপির সাবেক সভাপতি (যিনি ৫ আগস্টের পর খুন হয়েছেন) আবদুল মতিন ওরফে তোতা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. ইব্রাহিমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাইফুল ইসলাম, মো. রাজিব ওরফে রাজু, মহম্মদ রাশেদ, মো. হারুন ও মো. হাসান। এর মধ্যে হারুন ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইব্রাহিমের বড় ভাই মো. ইসমাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। আসামিরা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মামলার এজাহার ও নির্যাতনের শিকার নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর স্বামী কাভার্ড ভ্যানচালক। বাড়িতে তিনি তাঁর মেয়ে (১৭), এক দেবরসহ (২১) থাকেন। তাঁদের বাড়ির আশপাশে তেমন কারও বাড়িঘর নেই। ২১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ছয় যুবক তাঁর বাড়িতে আসেন। তাঁরা ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে তাঁর দেবরের মুখ, হাত-পা বেঁধে রাখেন। এরপর তাঁর মেয়ে ও তাঁকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান।
নারীর অভিযোগ, যুবকদের মধ্যে তিনজন তাঁকে টেনে নিয়ে যান বাড়ির পুকুর পাড়ে। আর তিনজন তাঁর মেয়েকে বসতঘরের পাশের রান্নাঘরের সামনে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে পুকুর পাড়ে এবং মেয়েকে রান্নাঘরের সামনে রাত তিনটা পর্যন্ত ধর্ষণ করেন ওই যুবকেরা। যাওয়ার সময় ঘর থেকে টাকাপয়সাসহ জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দিয়ে যান তাঁরা।
ওই নারী জানান, এ ঘটনার পর পরের দিন সকালে বিষয়টি স্থানীয় সমাজপতিদের জানান এবং বিচার চান। তাঁরা বিচারের নামে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে গতকাল বিকেলে স্থানীয় চর বালুয়া পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। তখন পুলিশ তাঁকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় পাঠায়।
নারী অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও তাঁদের লোকজন তাঁকে নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।